দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ আগস্ট: “একজন মহিলার উদ্দেশ্যে উনি এই ধরনের মন্তব্য করেন কি করে! ওনাকে কে এই সাহস দিয়েছে? উনি ৩ বছর খড়্গপুরের বিধায়ক ছিলেন, কি করেছেন!” না, কোনো বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী নয়, খোদ নিজের দলের নেত্রী তথা পৌরসভার বিদায়ী মহিলা কাউন্সিলর সুখরাজ কাউর এই ‘অগ্নিবাণ’ ছুঁড়ে দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে। আর, তাঁর স্বামী একদা দিলীপ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা সুখবীর সিং অটওয়াল স্পষ্ট জানালেন, “ওনার ফোন করে ক্ষমা চাওয়া উচিত, নাহলে আমাদেরকে অন্য কিছু ভাবতে হবে!” প্রসঙ্গত, রবিবার খড়্গপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে জলবন্দি বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে বসেছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ। তিনি বলেছিলেন, “আমি যদি সব করে দেব, আপনারা কি বাড়িতে বসে ঘুমাবেন। আমি সাংসদ কোটার টাকা দিয়েছি, এরপর বাড়ির পাশে নর্দমাও করে দেব?….যান গিয়ে কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে মলত্যাগ করে আসুন, কাদা জমা করুন! ওনাকেও বাড়ি থেকে বেরোতে দেবেন না! ছোটো লোকের সাথে ছোটো লোকের মতো আচরণ করুন। দরকার পড়লে ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে রাখুন!” আর, দিলীপের সেই মন্তব্য নিমেষে ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ওঠে সমালোচনার ঢেউ! ঘটনার একদিন পরেই এবার গর্জে উঠলেন ২ নং ওয়ার্ডের ওই মহিলা বিদায়ী কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী।
উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের ক্ষোভের মূল কারণ ছিল, তাঁর সাংসদ কোটার টাকা থেকে কোনও প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে না MKDA (Midnapore Kharagpur Development Authority)। কোনো কাজ না করার জন্য ক্ষোভ ছিল খড়্গপুর পৌরসভার প্রতিও। সেই ক্ষোভের কথা বলতে গিয়েই ওই ওয়ার্ডের নিজের দলের বিদায়ী কাউন্সিলর-কেই আক্রমণ করে বসেন দিলীপ। বিশেষ করে যখন বাসিন্দারা বলেন, “কাউন্সিলর কোনো কথাই শুনছেন না!” এরপরই, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে “অমার্জিত” (এক্ষেত্রে, অশালীন-ও) ভাষার প্রয়োগ করে বসেন দিলীপ। তারপরই, নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। মুখ খোলেন ওই বিদায়ী কাউন্সিলর ও তার স্বামী। বিজেপি নেতা তথা সুখরাজ কাউর-এর স্বামী দলের জেলা সহ-সভাপতিও। সোমবার তিনি বলেন, “আমাকে কিংবা আমার কাউন্সিলর (বর্তমানে, কো-অর্ডিনেটর) স্ত্রী’কে ওই এলাকায় ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন কি হয়েছে বলে! আমরা মহিলাদের সম্মান দিই। কিন্তু, উনি একটা মহিলার বিরুদ্ধে এত নোংরা কথা বলেছেন। রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ হয়ে ওনার মুখে এ কথা শোভা পায়না। কিছু বিরোধীদের কথা শুনে আমার স্ত্রী’কে দীলিপ বাবু বলছেন উনাকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে দিন এবং উনার বাড়ির সামনে মলত্যাগ করে আসুন। এটা প্রচুর নিন্দনীয় কথা। আমি এটা কখনও বরদাস্ত করব না। আমি চাই দীলিপ বাবু এসে বা ফোন করে আমার স্ত্রী’র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। যদি উনি ক্ষমা না চান তাহলে আমরা একটা চিন্তাভাবনা করব!” আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে তৃণমূলের নেতা তথা খড়্গপুর পৌরসভার প্রশাসক প্রদীপ সরকার আবার, দিলীপ বিরোধী কাউন্সিলর-দের নিজেদের দলে আহ্বান জানিয়েছেন! দিলীপের সমালোচনা করে প্রদীপ সোমবার বলেছেন, “উনি কিছু জানেন না! এসব ঘটনা রেলের জন্যই হচ্ছে। তা না করে পৌরসভা আর কাউন্সিলর-কে গালমন্দ করছেন। একজন মহিলার প্রতি এই ধরনের মন্তব্যের সমালোচনা না করে পারছিনা!” এদিকে, সোমবার এর প্রত্যুত্তরে ‘সাফাই’ দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ-ও। তিনি বলেছেন, “আমি কারুর নাম নিইনি। ওনাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমি এমকেডিএ আর পৌরসভার বিরুদ্ধে-ই বলেছি। টাকা দেওয়ার পরও কেনো কাজ হচ্ছে না, তা নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। আর, এখন তো কোনো বোর্ড নেই, কাউন্সিলরও নেই। কাজেই ওনাকে উদ্দেশ্য করে বলার প্রশ্নই ওঠেনা!” সে যাই হোক, দিলীপের এই সাফাইয়ে “চিঁড়ে ভেজে কিনা” বা “ক্ষোভের আগুন নেভে কিনা” তা সময়ই বলবে!