দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার ‘খাসতালুক’ সবংয়ে প্রায় ৬০ বছর পর পাকা হতে চলেছে মাটির স্কুলবাড়ি। প্রায় ৬০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাজ্যে যেখানে পড়ুয়ার অভাবে একের পর এক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হতে বসেছে, সেখানে সবংয়ের সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা ৯১ জন। শিক্ষক সংখ্যা চার। গত কয়েক দশক ধরে সুপ্রাচীন সেই স্কুলই চলছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি। মাথার উপরে টিনের ছাউনি। দেওয়াল থেকে খসে পড়েছিল মাটির পলেস্তারা। মাটির দেওয়ালে বড় বড় সব ফাটল। সঙ্গে ছিল সাপের ভয়ও! অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে, ভগ্নপ্রায় এই মাটির স্কুলবাড়িটি আবার সবংয়ের দীর্ঘদিনের বিধায়ক তথা রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার গড়েই অবস্থিত। গত সপ্তাহে সেই স্কুলের দৈন্যদশার কথাই উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমে।


স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবাশিস দাস সেই সময় জানিয়েছিলেন, “স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত, স্কুল পরিদর্শক, বিধায়ক তথা মন্ত্রী, জেলাশাসক— সর্বত্র বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও নতুন ঘরের জন্য বরাদ্দ মেলেনি।” ফলে মাটির বাড়িতেই ঝুঁকি নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন তাঁরা। অভিভাবক ও পড়ুয়ারাও জানিয়েছিলেন তাঁদের আতঙ্কের কথা। এই বিষয়ে ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান অনিমেষ দে জানিয়েছিলেন, “স্কুলের একটি ভবন পাকার। সেখানে দু’টি ক্লাস পরিচালিত হয়। বাকি অংশটি অবশ্য মাটির। কোনও এক জটিলতায় বরাদ্দ মেলেনি। আমরা স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রীর সাথে কথা বলে দ্রুত ওই ভবনটিও পাকা করার উদ্যোগ নিচ্ছি।” এরপরই চেয়ারম্যান ওই স্কুলের সমস্ত কাগজপত্র এবং পূর্বের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন টিআইসি দেবাশিস দাসকে। দেবাশিস তা স্থানীয় এসআই অফিসে জমা দেওয়ার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তরফে যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, সেখানে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে টেন্ডারের কাগজপত্র জমা করতে বলা হয়েছে। আগামী ৯ মাসের মধ্যেই পুরো কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে দরপত্রে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, “ওই স্কুলের বিষয়ে ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান অনিমেষ দে এবং রাজ্যের মন্ত্রী মানসরঞ্জন বাবু আমাদের জানিয়েছিলেন। আমরা দ্রুত ওই স্কুলের কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই।” রাজ্যের মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সমগ্র শিক্ষা মিশনের টাকা বন্ধ। তা সত্ত্বেও রাজ্যের সমস্ত স্কুলের উন্নয়ন করে চলেছেন মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী। সবংয়ের এই স্কুলটির একটা অংশ পাকার হলেও বাকিটা মাটির, এটা ঠিক। জেলা পরিষদের অর্থানুকূল্যে আমরা পুরো স্কলটিই পাকার করে দিচ্ছি।”
স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি এবং জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান অনিমেষ দে। সেইসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার সবসময়ই পড়ুয়াদ পাশে আছে। কোথাও দু’একটি সমস্যা থাকলেও দ্রুত সমাধান করেন আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু থেকে আমাদের সবংয়ের বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়াও চান স্কুলগুলি সুন্দরভাবে চলুক।’ আন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্কুলের টিআইসি দেবাশিস দাস বলেন, “আমরা খুব খুশি। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়, মন্ত্রীমশাই সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।” বৃহস্পতিবার পড়ুয়াদের মিষ্টিমুখও করানো হয় স্কুলের তরফে। আর এই খুশিতে যোগ দেন অভিভাবক থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও।











