দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জুন: শাসকদলের গুন্ডার ভূমিকায় খোদ থানার ওসি! এমনটাই অভিযোগ এলাকার আপামর বাসিন্দাদের। ক্যান্সার আক্রান্ত বিজেপি প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করছেন থানার ওসি, ভাইরাল সেই ভিডিও ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি! সোমবার বিকেল থেকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে এলাকার মহিলারা গর্জে উঠে বলছেন, “এরা পুলিশ নাকি গুন্ডা!” সোমবার সন্ধ্যা নাগাদই বিষয়টি পরিষ্কার হয়। জানা যায়, ভাইরাল ওই ভিডিও-তে যিনি পুলিশের হাতে মার খাচ্ছেন তিনি ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার তুঙ্গাধুয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভঙ্কর মাহাত। এবার ঝাড়গ্রাম জেলার ১১ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের বিজেপি প্রার্থী। গত ৫-৬ বছর ধরে তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন বলেও জানা যায়। অভিযোগ, সোমবার দুপুরে তিনি যখন ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সেই সময়ই তাঁর বাড়ির কাছে রাস্তায় আটকে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় পুলিশের তরফে। নেতৃত্ব দেন খোদ সাঁকরাইল থানার ওসি। ভাইরাল ভিডিওতেও দেখা যায় প্রথমে চড়থাপ্পড় এবং তারপর মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে শুভঙ্কর মাহাতকে। এরপর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করেন এবং জেলা বিজেপি নেতৃত্বের সহায়তায় মেদনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। মেদিনীপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই ক্যান্সার আক্রান্ত শুভঙ্কর মাহাত সাংবাদিকদের জানান, “সাঁকরাইল থানার ওসি আমাকে মারধর করেছে। আমাকে মাটিতে ফেলে মেরেছে। কোমরে লাথি মারা হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি, বারবার হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করিনি; এটাই আমার অপরাধ!” সোমবার রাতেই ঘটনার ভিডিও সহ সমাজমাধ্যমে বিস্তারিত পোস্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বছর ৪৫’র শুভঙ্কর মাহাত’র পরিজনেরা অভিযোগ করেন, “কাকু (শুভঙ্কর মাহাত) বিজেপির হয়ে দাঁড়ানোর পরই বাড়িতে যখন তখন পুলিশ আসত। হুমকি দিত। মধ্যরাতেও বাড়ির দরজায় এসে লাথি মারতো পুলিশ। আর এর নেতৃত্ব দিয়েছে সাঁকরাইল থানার ওই ওসি। তাহলে কি বিরোধী দলের হয়ে দাঁড়ানো যাবে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই থাকবে? তাহলে আর ভোট করানোর দরকার নেই। উনিই থাকুন।” সোমবার দুপুরে সাঁকরাইল থানার ওসির নেতৃত্বে ক্যান্সার আক্রান্ত শুভঙ্কর মাহাতকে তাঁর বাড়ির সামনের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের চিৎকারে এলাকার পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই বেরিয়ে আসেন। কেউ কেউ পুরো ঘটনার ভিডিও করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর মার থামাতে বাধ্য হয় পুলিশ! যদিও ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে শুভঙ্কর বাবুকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁর স্ত্রী, সন্তান সহ পরিবার ও প্রতিবেশীদের সামনেই। এরপরই সন্ধ্যা নাগাদ ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি নেতৃত্বের উদ্যোগে শুভঙ্করকে ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন শুভঙ্কর। জেলা বিজেপির তরফে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম জেলার ১১ নম্বর জেলাপরিষদ আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শ্রী শুভঙ্কর মাহাতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কুড়মি সমাজের এই মানুষটি দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। ঝাড়গ্রামের বিজেপি কার্যালয় থেকে সাঁকরাইল থানার পাতরা অঞ্চলে যখন নিজের বাড়ি ফিরছিলেন তখন পুলিশ শুভঙ্কর বাবুকে আটকায় এবং সাঁকরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার সইফুদ্দিন কোনো কারণ ছাড়াই ওনাকে মারধর করেন। শুভঙ্কর বাবুর দোষ, উনি বিরোধী দল করেন। উনি তৃণমূলের হুমকি ও ভয় দেখানো কে উপেক্ষা করে, পুলিশের চাপ কে অগ্রাহ্য করে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন এবং উনি প্রার্থীপদও প্রত্যাহার করেননি। শুভঙ্কর বাবুর ছোট্ট বাচ্চাটির সামনেই পুলিশ শুভঙ্কর বাবুকে অমানবিক ভাবে হেনাস্থা ও মারধর করে, এমনকি শুভঙ্কর বাবুর স্ত্রী সহ পরিবার বা স্থানীয়রা পুলিশের কাছে উনি যে ক্যান্সার-এ আক্রান্ত সে কথা বলার পরেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। পরে আহত শুভঙ্কর বাবুকে মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। পুলিশের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের আশা করা বৃথা, কারণ বাংলার পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে।” ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ঠিক কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”