দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ অক্টোবর: বৌমার অবৈধ সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ায় এবং প্রতিবাদ করায়, তাঁকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠলো অভিযুক্ত বৌমা সকিনা খাতুনের বিরূদ্ধে। এমনটাই অভিযোগ, সাকিনার স্বামী পরবেস আলী ও তার মা সঞ্জুরা বেগমের। ঘটনাটি ঘটেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার অন্তর্গত কলাগ্রাম অঞ্চলের আখরাপোতা গ্রামে। গোটা ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করার অভিযোগ উঠেছে কেশপুর থানার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, পারবেসের বাবা সেক ইসলাম আলীকে গত শুক্রবার রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, রবিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে মৃত্যু হয় ইসলাম আলীর (বয়স আনুমানিক ৬৫)।

thebengalpost.net
মৃত ইসলাম আলী :

আখরাপোতা গ্রামের বাসিন্দা সেক পারবেশ আলীর অভিযোগ, কর্মসূত্রে তাকে (পারবেস) দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। সেই সুযোগে কেশপুর থানার শাকপুরের বাসিন্দা সেক সেরাজুল আলীর সঙ্গে তার স্ত্রী’র অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বেশকিছুদিন যাবত, তার বাড়িতেও যাতায়াত ছিল সেরাজুলের। গত দু’বছর আগে পারবেস ও সাকিনা’র ৭ বছরের ছেলে তার মা ও সেরাজুলকে বাড়ির মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে! অভিযোগ, তারপরই পারবেসের স্ত্রী সাকিনা খাতুন তার ছেলেকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করে! সেই সময় পারবেসের মা দেখে ফেলে এবং কোনো রকমে সাকিনার হাত থেকে তার নাতিকে ছাড়িয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে, পারবেসের স্ত্রী তার প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ ১৯ মাস বাদে সাকিনা ফিরে আসে গ্রামে এবং ভুল স্বীকার করে পারবেসের সঙ্গে থাকতে চায়। তখন পারবেস তার স্ত্রী’কে বলে, সেরাজুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে। কিন্তু, তাতে রাজি হয়নি পারবেসের স্ত্রী সাকিনা।পারবেসের আরও অভিযোগ, এরপরই তার স্ত্রী সাকিনার বাপের বাড়ীর এবং স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সেরাজুলের যোগসাজসে তৃণমুলের অঞ্চল সভাপতি কাজী সাহাদাত, বুথ সভাপতি সেক মজু আলি সহ শাসকদলের স্থানীয় নেতারা নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করে পারবেসের পরিবারের উপর। সামাজিক বয়কট, বাড়ির বাইরে বেরোতে না দেওয়া, বাড়ির উঠোনে থাকা ফলের গাছ কেটে নেওয়ার পাশাপাশি, হুমকি ও মারধরও করা হয় পারিবারের লোকেদের। বিষয়টি কেশপুর থানায় লিখিত আকারে জানাতে গেলেও অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। এমনটাই অভিযোগ পারবেসের। এরপরই মেদিনীপুর আদালতে স্ত্রী সাকিনা খাতুন ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে পারবেস। একই সঙ্গে, পোষ্টের মাধ্যমে কেশপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে পারবেস। তারপরও, শাসকদল তৃণমুলের স্থানীয় নেতৃত্ব কাজী সাহাদাত, সেক আজব আলি, সেক হাসমত আলী, সেক মজু আলি সহ অন্যান্যরা জোর করে পারবেসের স্ত্রী’কে পারবেসের বাড়ীতে ঢোকায়, পাশাপাশি পারবেসের মা ও বাবাকে নানা ভাবে শাঁসায়। বারে বারে পরিবারের উপর অত্যাচারের বিষয়ে কেশপুর থানার ওসিকে জানানো হলেও, উল্টে ওসি পারবেসকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল :

এরপর, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পারবেসের স্ত্রী সাকিনা পানীয় জলে ঘাস মারার বিষ মিশিয়ে সেক ইসলাম আলীকে খাইয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর পরিবারের অন্যান্যরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইসলাম আলীকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করে। কিন্তু, রবিবার রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ মৃত্যু হয় ইসলামের। এরপর, ময়নাতদন্তের আগেই মৃতদেহ ছিনিয়ে নেওয়ার আতঙ্কে মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ জানান ইসলামের স্ত্রী সঞ্জুরা বেগম। একপ্রকার অসহায় অবস্থায় পুনরায় পুলিশ সুপারের কাছেও অভিযোগ দায়ের করে পারবেস। শান্তিতে গ্রামে বসবাস ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সেক পারবেস আলি ও তার পরিবার। অন্যদিকে, এই বিষয়টি-তে শাসকদলের কোনো ভূমিকাই নেই এবং পুরোপুরি ‘পারিবারিক’ আখ্যা দিয়ে, দলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি উত্তমানন্দ ত্রিপাঠী।

thebengalpost.net
কেশপুর থানা (ফাইল ফটো) :