Recent

Midnapore: নাবালিকা প্রেমিকাকে নিয়ে হিমাচলে, ‘অপহরণে’ ধৃত গৃহশিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার মেদিনীপুর জেলে! ‘খুন করা হয়েছে’, দেহ নিতে এসে দাবি মায়ের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ৯ জুলাই: “আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি অপরাধীদের শাস্তি চাই!” গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হওয়া, বছর ২৫-র সেখ হোসেন আলির মৃতদেহ নিতে এসে, মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই আর্তনাদ করেন তাঁর মা হাসনা বেগম। উল্লেখ্য যে, গত ৫ জুলাই (২০২৪) মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বা সেন্ট্রাল জেল (Midnapore Central Correctional Home) থেকে নাবালিকা অপহরণের অভিযোগে ধৃত, পেশায় ‘গৃহ শিক্ষক’ সেখ হোসেন আলির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। ৬ জুলাই পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় বলে অভিযোগ। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার অধীন দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকার বাসিন্দা, বছর ২৫-র হোসেন আলির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করা হয়। তাই দেহ নেওয়া হয়নি! উল্টে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। গতকাল অর্থাৎ সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চে শুনানিও হয়। সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর, বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তমলুক থানা, তমলুক সংশোধনাগার (তমলুক সাব কারেকশনাল হোম) এবং মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের (মেদিনীপুর সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোম) সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। একইসঙ্গে, আগামী ১৫ জুলাই (সোমবার) মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়।

সেক হোসেন আলি (ছবি- পরিবার সূত্রে):

এরপরই, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে ছেলের দেহ নিতে পৌঁছন পরিবারের সদস্যরা। সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা প্রথমে যান মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালী থানায়। এরপরর, বেলা ২টো নাগাদ পৌঁছন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করা হয়। মৃতের মা হাসনা বিবি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর দাবি, “আমার ছেলে শিক্ষিত। ভাল কম্পিউটার জানত। টিউশন করত। ওই মেয়েটির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়। মেয়েটির বাড়ির লোক একথা জানতে পারার পরই মেয়েটির উপর অত্যাচার শুরু করে। এরপর মেয়েটির চাপেই আমার ছেলে ওকে নিয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারি হিমাচল প্রদেশে গেছে। পুলিশ সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসার পর থেকেই আমার ছেলের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করে। ৫ জুলাই আমাদের জানানো হয়, ও নাকি মেদিনীপুর জেলে আত্মহত্যা করেছে! তার আগে আমাদের জানানোই হয়নি, ওকে কবে তমলুক থেকে মেদিনীপুরে পাঠানো হয়েছে, কেনোই বা পাঠানো হল! এটা কিছুতেই আত্মহত্যা হতে পারে না। আমার ছেলেকে ওরা খুন করেছে। আমি এর সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তি চাই।” এই বিষয়ে তমলুক জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আদালতের অনুমতি নিয়ে যুবককে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে মৃত যুবকের মা:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার অধীন দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকার বাসিন্দা সেক হোসেন আলি নামে ওই যুবক গৃহ শিক্ষকতা করতেন। নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। মেয়েটির বাড়ির লোক এর প্রতিবাদ করে এবং মেয়েটিকে মারধর করে বলে অভিযোগ। এরপরই, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ১৪ বছরের ওই নাবালিকা ছাত্রীকে নিয়ে হোসেন হিমাচল প্রদেশ চলে যায় বলে অভিযোগ। এরপরই, হোসেনের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে হেনস্থা এবং অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাড়ির লোক। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর, গত ২৭ জুন হিমাচল প্রদেশের সোলান জেলা থেকে ওই হোসনকে গ্রেপ্তার করে তমলুক থানার পুলিশ। এরপর তাঁকে সাতদিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হয় তমলুক। ১ জুলাই তমলুক আদালতে পেশ করা হলে ১২ জুলাই পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। মেয়েটিকে পাঠানো হয় একটি সরকারি হোমে। হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, ৩ জুলাই পর্যন্ত তাকে তমলুক উপ সংশোধনাগারে (সাব কারেকশনাল হোমে) রাখা হয়। এরপর হঠাৎই পরিবারের সদস্যদের কিছু না জানিয়েই ৪ জুলাই তাঁকে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ৫ জুলাই সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মেয়েটির সেন্ট্রাল জেলের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে! পুলিশের দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। কিন্তু, মৃতের মায়ের অভিযোগ, খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলেকে। এর পেছনে মইদুল আলি, ফিরোজ সহ নাবালিকার একাধিক আত্মীয়ের ‘হাত’ আছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার বন্ধুর দেহ নিতে এসে তমলুক আদালতের ল-ক্লার্ক সেক সানাউল বলেন, “তমলুক ও মেদিনীপুর জেল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই সবটা এড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ির লোককে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত করেছে। আজকেও (মঙ্গলবার) আমরা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন সাহায্য পাইনি। আমাদের চার ঘন্টা বসিয়ে রেখে দেহ দেওয়া হয়েছে। গাড়ির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়নি। আমরা নিজেরাই গাড়ি ভাড়া করে দেহ নিয়ে যাচ্ছি। মেয়ের এক মেসো সহ বাড়ির লোকরা প্রভাবশালী! সবটাই তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী হচ্ছে। আদালতেই আমরা সব জানাব!”

বিচারের আশায়:

News Desk

Recent Posts

Midnapore: স্ত্রী-র পরকীয়া ধরে ফেলেছিলেন, ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে পুরো পরিবারকেই খুনের ছক, মৃত্যু স্বামীর; সিনেমাকেও হার মানাবে ডেবরার ঘটনা

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট: স্ত্রী-র পরকীয়ার বলি স্বামী! মৃত স্বামীর নাম বুদ্ধদেব দোলাই…

2 days ago

Medinipur: গড়বেতার নির্জন এলাকায় রেললাইনে হঠাৎ বিকট ‘শব্দ’, থমকালো রাজধানী! নমুনা সংগ্রহের পর ফরেন্সিক দল যা জানাল…

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: শিলাবতী নদীর উপর রেলওয়ে ব্রিজ। তার উপরই…

3 days ago

Midnapore: একদিকে চন্দ্রযান, অন্যদিকে হরিনাম; শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-ক্রীড়া ও পরিবেশের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের বার্ষিক প্রদর্শনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: আধুনিক যুগের বিজ্ঞান থেকে সনাতন সংস্কৃতি, যোগব্যয়াম-খেলাধুলার…

5 days ago

Kharagpur: নতুন কারখানায় কাজ শুরু করবে রশ্মি মেটালিক্স, বাধা সৃষ্টি হলে পুলিশের পদক্ষেপ; নির্দেশ আদালতের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: নতুন কারখানায় অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারবেন…

6 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের একটি বুথেই ৪৯ জন ‘মৃত’ ভোটার, মৃত্যুর ৭ বছর পরও বাদ পড়েনি নাম! প্রশাসনের ঘাড়েই দায় চাপালেন BLO

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: SIR-এর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এই ইস্যুতে…

6 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের মেয়ের ইংলিশ চ্যানেল জয়! নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন আফরিন

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২৯ জুলাই: মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত্রি ঠিক ৯টা ৩১ মিনিট…

1 week ago