thebengalpost.net
নিজের ভাই ও কাউন্সিলরের সঙ্গে ভি. কৃষ্ণা রাও (মাঝখানে) :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ অক্টোবর: “ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার” নচিকেতার সেই বিখ্যাত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ গানই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরে! ‘অবসরপ্রাপ্ত’ সুস্থসবল বাবাকে ‘অসুস্থ’ সাজিয়ে মেদিনীপুরের রিহ্যাবে ভর্তি করে বেপাত্তা খড়্গপুরের ‘গুনধর’ ছেলে। সেকেন্দ্রাবাদে নিজের চাকরিস্থলে এখন বহাল তবিয়তেই পরিবার নিয়ে আছেন ‘উচ্চশিক্ষিত’ চাকুরিজীবী সেই ছেলে। এদিকে, প্রায় সাড়ে তিন মাস পর রবিবার (৩১ অক্টোবর) মেদিনীপুরের রিহ্যাব থেকে নিজের ভাইয়ের চেষ্টায় বেরিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন তাঁর ৬৫ বছর বয়সী বাবা ভি. কৃষ্ণা রাও! বললেন, “বিশ্বাস করতে পারছিনা, আমার ছেলেই এখানে আমাকে ভর্তি করিয়েছে”! আর, সহৃদয় ভাই ভি. জগনমোহন রাও বললেন, “ছেলে নিয়ে না গেলে, দাদা আমার কাছেই থাকবে”। মেদিনীপুর শহরের ওই বেসরকারি রিহ্যাব থেকে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী কৃষ্ণা রাওকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা করলেন এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর বান্তা মুরলী রাও। যাচাই না করে অবসরপ্রাপ্ত ওই রেল কর্মচারীকে ভর্তি করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে ওই রিহ্যাব সেন্টার বা মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও।

thebengalpost.net
ভি. কৃষ্ণা রাও (বামদিকে) এর সঙ্গে বান্তা মুরলী রাও (ডানদিকে) :

ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরের ১৬ নং ওয়ার্ডের গট্টরপাড়া এলাকার। গত ১৩ জুলাই (২০২১) নিজের বাড়ি থেকে হঠাৎ করে খড়্গপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের প্রাক্তন কর্মী ভি. কৃষ্ণা রাওকে তুলে নিয়ে যায় মেদিনীপুরের ধর্মায় অবস্থিত একটি রিহ্যাবের কর্মীরা। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস রীতিমতো ‘সুস্থ’ অবস্থাতেই রিহ্যাবে কাটাতে বাধ্য হন কৃষ্ণা। আজ, রবিবার ৬৫ বছর বয়সী ভি. কৃষ্ণা রাওকে রিহ্যাব থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান কৃষ্ণা রাও এর ভাই ভি. জগনমোহন রাও। সঙ্গে ছিলেন এলাকার প্রাক্তন তৃণমুল কাউন্সিলর বান্তা মুরলী রাও। কৃষ্ণা রাও এর অভিযোগ, তাঁর ছেলে গত ৩ জুলাই তাঁকে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে খড়্গপুর রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ ই জুলাই তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই রিহ্যাবের কয়েকজন তাঁকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। বৃদ্ধের অভিযোগ, তিনি সারা জীবনে কোনো দিন কোনো রকম নেশা করেননি, তারপরেও তাঁকে ড্রাগ এডিকশন সেন্টারে তিনমাস বন্দী অবস্থায় কাটাতে হলো! কেন তাঁকে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল, তা বুঝতেই পারেননি তিনি। এও জানতেন না, তাঁর ছেলেই ওই রিহ্যাব সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই কাজ করিয়েছে! কৃষ্ণা রাওয়ের ভাই জগনমোহন রাও বলেন, তাঁর ভাইপো ভি. বিজয় কুমার তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে যাতে দেখাশোনা করতে না হয়, সেজন্য মানসিক রোগী সাজিয়ে রিহ্যাবে ভুল বুঝিয়ে ভর্তি করে হায়দ্রাবাদ পালিয়ে যায়। তিনি বহু খোঁজ নেওয়ার পর জানতে পারেন, তাঁর দাদা এখানে ভর্তি! তাই নিজের উদ্যোগে দায়িত্ব নিয়ে তিনি তাঁর দাদাকে বাড়ি নিয়ে গেলেন।

thebengalpost.net
নিজের ভাই ও কাউন্সিলরের সঙ্গে ভি. কৃষ্ণা রাও (মাঝখানে) :

এই ঘটনায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেন এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর বান্তা মুরলী রাও। তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এই ধরনের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রিহ্যাবের বিরুদ্ধে। বললেন, “একজন ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে তিনমাস বন্দী করে রাখা হয়েছিল! যা কোনো ভাবেই পারেনা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।” তিনি রিহ্যাবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। যদিও, রিহ্যাবের তরফে জানানো হয়, ওই বৃদ্ধের ছেলের কথামতোই ওঁর মানসিক চিকিৎসার জন্য তুলে আনা হয়েছে। তবে, স্থানীয় মানুষ বা লোকাল কাউন্সিলর অথবা লোকাল পুলিশকে জানানো হয়নি এটা ঠিক। এদিকে, ছেলে ভি. বিজয় কুমার জানিয়েছেন, “বাবার মানসিক অসুস্থতা ছিল। নানারকম অসঙ্গতি মূলক আচরণ করতেন, তাই এখানে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার মায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই।” কিন্তু, মানসিক রোগীকে সাইক্রিয়াটিস্ট বা মনোচিকিৎসক না দেখিয়ে রিহ্যাব সেন্টার বা নেশা নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সকলেই! অন্যদিকে, নিজের ছেলের এই কীর্তির কথা শুনে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন ভি. কৃষ্ণা রাও। তবে, মুক্ত হতে পেরে আজ তিনি খুশিও! শুধু খুশি নয়, নিজের ভাইয়ের এই আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় একপ্রকার আপ্লুত কৃষ্ণা রাও।