দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’। ১৫ প্রাণের বিনিময়ে ২০২৩-এর ‘গণতন্ত্র-উৎসব’ পরিণত হল গণতন্ত্রের উৎ-শবে! মৃত ১৫ জনের মধ্যে অধিকাংশই শাসকদলের কর্মী। এছাড়াও, বিজেপি ও সিপিআইএমের একাধিক কর্মী সহ মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে শনিবারের ভোট-হিংসায়। রাজ্য জুড়ে দফায় দফায় গুলি, বোমাবাজি, মারামারি, ব্যালট বক্স ছিনতাই, ছাপ্পা ভোট ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত বাংলায় যেন মৃত্যু-মিছিল! কেউ হারালেন ভাইকে, কেউবা দাদা কিংবা সন্তানকে। একের পর এক মায়ের কোল খালি হয়ে গিয়েছে। শুধু ভোটের দিন ১৫ জনের প্রাণ গিয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রে খবর। যদিও, অপর একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে শনিবার প্রাণ গিয়েছে ১৪ জনের। মৃত রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে ৯ জনই তৃণমূলের বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে ৩১ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক-হিংসায় পশ্চিমবঙ্গে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। প্রশ্ন উঠেছে এই মৃত্যু-মিছিলের দায় কার? রাজ্যবাসীর তরফে প্রথমেই দায়ী করা হয়েছে ‘মেরুদণ্ডহীন’ নির্বাচন-কমিশনকে। তবে, রাজ্য সরকারের ‘প্রত্যক্ষ’ মদত, কেন্দ্রীয় সরকারের কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে উদাসীনতা আর আদালতের এক দফায় ভোট নিয়ে কড়া মনোভাব না নেওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে।

thebengalpost.net
সকালে উৎসবের মেজাজে ভোট শুরু হয়েছিল কেশপুরেও:

ভোটের দিন সকাল থেকেই মুহুর্মুহু মৃত্যু আর হামলার অভিযোগ আসতে শুরু করে মুর্শিদাবাদ থেকে। কংগ্রেস আর তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষে শুধু এই জেলাতেই অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। মুর্শিদাবাদ ছাড়াও এদিন সকাল থেকে ভোট-হিংসায় ‘উত্তপ্ত’ কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে৷ মুর্শিদাবাদের পরই এদিন দু’জন করে মৃত্যু হয়েছে কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায়৷ এক জন করে প্রাণ হারিয়েছেন মালদহ, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, পূর্ব বর্ধমান জেলায়৷ যদিও, এতজনের মৃত্যুর পরও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে, অতীতের উদাহরণ টেনে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। শনিবার সন্ধ্যায় কমিশনের দপ্তরে তালা লাগানো ছাড়াও মঙ্গলবার আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সিপিআইএম ও কংগ্রেসের তরফে, এই সবকিছুর জন্য বিজেপি-তৃণমূলের গোপন আঁতাত বা সেটিং তত্ত্বকেই দায়ী করা হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকেই জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ছাপ্পা ভোট, বিরোধীদের এজেন্টকে বের করে দেওয়া সহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। কেশপুরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিনজন। তাঁরা চিকিৎসাধীন আছেন মেদনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মোহনপুর ও নারায়ণগড়ে ভোট কর্মীদের সামনেই চলতে থাকে তৃণমূলের ছাপ্পা ভোট। দাসপুর, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, সবং, গড়বেতা সহ বিভিন্ন এলাকাতেই ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। তুলনামূলকভাবে নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে জঙ্গলমহল শালবনী ব্লকে। উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন মানুষ। শাসক ও বিরোধী দলগুলির প্রার্থী, এজেন্ট এবং কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা গেছে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। অভিযোগ আসেনি গোয়ালতোড় এলাকা থেকেও। এইসব এলাকার বিভিন্ন বুথে রাত্রি অবধি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। যদিও, CPIM ও BJP-র তরফে জেলা জুড়ে ব্যাপক রিগিং ও ছাপ্পার অভিযোগ করা হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, “অতীতে কখনো এত শান্তিতে ভোট হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ছোটখাটো কিছু অশান্তি ও সমস্যা হয়েছে। তবে, বিরোধীদের তরফে নানা দাবি করা হলেও, থানায় একটিও অভিযোগ জমা পড়েনি।”

thebengalpost.net
শালবনীর চৈতা গ্রামে শাসক ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীরা একসঙ্গে ভলিবল খেলায় মাতেন শনিবার বিকেলে: