দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেনাডিহি এলাকায় শিশু খুনে মূল অভিযুক্তকে ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে গড়বেতা ৩নং ব্লকের গুয়াদহ বাজার থেকে বছর ২৮-র বকুল গায়েনকে পাকড়াও করে চন্দ্রকোনারোড পুলিশ বিট হাউসের পুলিশ কর্মীরা। পরে কোতোয়ালী থানার পুলিশ পৌঁছে শিশু খুনে মূল অভিযুক্ত বকুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ। শনিবার বকুল গায়েনকে মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হবে বলে সন্ধ্যা নাগাদ জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক আধিকারিক।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই কংসাবতী নদীর (বা, কাঁসাই নদী) পাড়ে একটি নির্জন এলাকা থেকে রীতিমত গর্ত খুঁড়ে ৮ বছরের এক শিশুর (ক্ষতবিক্ষত) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাইফুল ইসলাম মণ্ডল নামে ওই শিশুটি তিন দিন ধরে অর্থাৎ ২৬ জুলাই বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। মৃত শিশুর বাবা সাইদুল মণ্ডল কোতোয়ালী থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন। তিন দিন পর, ২৯ জুলাই সকালে গ্রামবাসীদের সহায়তায় নদীর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর তারপরই মেদিনীপুর গ্রামীণের মহতাপনগর সংলগ্ন বেনাডিহি গ্রামে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি হয়। অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন স্থানীয়রা। সেই ঘটনাতেই মৃত শিশু সাইফুল ইসলামের সৎ দাদা আনি মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজনকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও মূল অভিযুক্ত বকুল গায়েন ঘটনার দিন থেকেই ফেরার ছিল! অবশেষে প্রায় দেড় বছর পর পুলিশের জালে ধরা পড়ল বকুল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, গড়বেতা ৩নং ব্লকের গুয়াদহ বাজার থেকে শুক্রবার বিকেলে বকুলকে পাকড়াও করে চন্দ্রকোনারোড পুলিশ বিট হাউস। জানা যায়, গত দেড়-দু মাস ধরে চন্দ্রকোনারোড সংলগ্ন গুয়াদহ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছিল বকুল। গোপন সূত্রে সেই খবর পৌঁছয় চন্দ্রকোনারোড পুলিশ বিট হাউসের আধিকারিকদের কাছে। তক্কে তক্কে ছিল পুলিশও। শুক্রবার শীতের বিকেলে বছর ২৮-র বকুল যখন গুয়াদহ বাজারে একটি দোকানে বসে বেশ আয়েশ করে চা খাচ্ছিল, সেই সময়ই পুলিশ তাকে পাকড়াও করে! পরে কোতোয়ালী থানার পুলিশ পৌঁছে বকুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে মন্দিরময় পাথরা সংলগ্ন মহতাপনগরের কাছে বেনাডিহি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল মন্ডল। তাঁর দু’টি বিয়ে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী তাঁর ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন বেশ কয়েক বছর আগে। তবে, তাঁদের ছেলে (আনি মণ্ডল) সাইদুলের (বাবার) সঙ্গেই থাকত। বছর দশেক আগে সাইদুল মণ্ডল পুনরায় বিয়ে করেন। ৮ বছরের সাইফুল ইসলাম মণ্ডল তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। গ্রামবাসীরা সন্দেহ করেন, সাইদুল মণ্ডলের প্রথম পক্ষের ছেলে বছর ২৪-র আনি মণ্ডল এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ‘ভাড়াটে খুনি’ বকুলকে দিয়ে ছোট্ট সাইফুল ইসলামকে খুন করিয়েছিল। সম্পত্তির লোভেই খুন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। ঘটনার পর থেকেই ফেরার (পলাতক) ছিল বকুল গায়েন। ঘটনার দিন (২৯ জুলাই, ২০২৩) বকুলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন উত্তেজিত জনতা। আরো কয়েকজনের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পুলিশ আনি মণ্ডল সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল। অবশেষে মূল অভিযুক্ত বকুল গায়েনকেও ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পাকড়াও করল পুলিশ!