তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: সম্প্রতি (১৪ জুন), আদালতের রায়ে নদী সংলগ্ন ইটভাটা গুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরই, নদী সংলগ্ন ইটভাটা গুলি সরকারি নির্দেশে অবৈধ বলেও ঘোষিত হতে চলেছে! এদিকে, সারা পশ্চিমবঙ্গে ইটভাটা গুলির সাথে কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই শিল্পের বর্তমান অবস্থা এমনিতেই রুগ্ন। বিশেষ করে কাঁচামালের সমস্যায় জর্জরিত ইটভাটার মালিকরা। কয়েক মাসের মধ্যেই কয়লার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মাটি পাওয়ার সমস্যা আছে। তার উপর আদালতের এই নির্দেশে দিশেহারা ইটভাটার মালিকরা! তাদের দাবি, এত বড় পরিকাঠামো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। এমনিতেই একটা ইটভাটার চুল্লি থেকে তার অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করতে অনেক সময় লাগে, তার উপরে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তাছাড়াও, একটি ভাটা তৈরি করতে প্রায় কুড়ি বিঘা জমি লাগবে। সবমিলিয়ে, একপ্রকার মাথায় হাত পশ্চিম মেদিনীপুরের ইটভাটা মালিকদের।
এনিয়ে, ইটভাটা মালিক সংগঠনের রাজ্য মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর সাবির আহমেদ বলেন, “ইটভাটা গুলি পান দোকান নয়। রাতারাতি বসানো যাবে, রাতারাতি সরিয়ে নেওয়া যাবে! আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিয়ম-কানুন মেনে জিএসটি সহ বিভিন্ন ট্যাক্স-রয়েলটি সমস্ত সরকারকে দিয়ে আসছি। এখন কিভাবে আমাদের বৈধ ব্যবসা অবৈধ হয়ে যাবে? সরকার দয়াকরে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন!” তিনি যোগ করেন, “এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ শ্রমিক কৃষি কাজের সাথে সাথে আমাদের ভাটাগুলোতেও কাজ করে। যার ফলে ভাটাগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান করে আসছে। ভাটা সরালে প্রথমত অনেককেই ভাটা বন্ধ করে দিতে হবে। এমনিতেই আমাদের জেলায় ১০৬ টি ইটভাটা আছে। প্রতিবছরই দু-একটি করে ভাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুক, নতুবা সরকারি নির্দেশের বেড়াজালে অনেক ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে।” প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ভাটাগুলি চলে আসছে এই নিয়মকানুন মেনেই, সেখানে এই সমস্ত ভাটাগুলি সরানোর নির্দেশে বিপাকে পড়তে চলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর শহর রাজ্যের হাজার হাজার ইটভাটা মালিকরা। এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, “পরিবেশ রক্ষার কারণে জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে হয়তো এই রায় দিয়েছে আদালত। ভাটাগুলির ফলে অনেক জায়গায় বন্যা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। আবার, অনেক জায়গায় নদীর পাড়ের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত সরকার বা প্রশাসন মনোযোগ সহকারে ভাটা মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।” এখন দেখার ভাটার পরিণতি কি হয়!