দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার শনিবার তাঁর দপ্তর থেকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, “হেলমেট (Helmet ⛑️) না পরলে এবার কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাইকে যতজন চাপবেন, প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট থাকা বাধ্যতামূলক। মহিলা ও শিশুদের মাথাতেও হেলমেট থাকা প্রয়োজন। কারণ, দুর্ঘটনা লিঙ্গ দেখে আসেনা! আমাদের জেলায় প্রতি বছর দুর্ঘটনার কারণে প্রচুর মৃত্যু হয়! তার অন্যতম কারণ হেলমেট না থাকা। জাতীয় সড়কে উঠলেই সবার আগে দেখা হবে, মাথায় হেলমেট আছে কিনা, তারপর দেখা হবে গাড়ির কাগজপত্র! হেলমেট না পরলে প্রথমবার স্পট ফাইন দিতে হবে। দ্বিতীয়বার, লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা হবে।” আর, পুলিশ সুপারের এই বার্তার পরদিনই নাকি মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সকল যুব কর্মীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “হেলমেট ও মাস্ক পরতে হবে। নাহলে পুলিশ যা পদক্ষেপ করবে তা মাথা পেতে নিতে হবে। কোনও ভাবেই শাসক দলের কর্মী হিসেবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা বা পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ বরদাস্ত করা হবে না!” এক্ষেত্রে, জেলার কোন বড় নেতাকে ফোন করে অনুনয়-বিনয় করলেও যে তার হয়ে পুলিশের কাছে কোন সাফাই দেওয়া হবে না, তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য যে, বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ পাওয়া যায়, শাসকদলের কর্মী হলে নাকি সাত খুন মাফ! অন্যদিকে, হেলমেট না পরা সহ বিভিন্ন কারণে ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই নাকি ৫ মিনিটের মধ্যে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের কাছে ফোন চলে আসে- “ওকে ছেড়ে দিন। ভালো ছেলে। আমাদের দলের ছেলে। আর এই ভুল করবেনা!” অগ্যতা, সাধারণ মানুষের উপর আইন ফলিয়ে ফাইন নেওয়া হলেও, শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বা শাসকদলের কোন নেতার পরিচিত হওয়ার সুবাদে, সেই যুবককে বাধ্য হয়েই অনেক সময় ছেড়ে দেয় পুলিশ। এবার, জেলা পুলিশের তরফে কড়া বার্তা দেওয়ার পরই, পুরানো সেই ‘কালচার’ বা ‘সিস্টেম’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে শাসকদলও। কোনও অন্যায়ের জন্য আর পুলিশের কাছে কোনও রকম সুপারিশ যাবে না, দলের কর্মী হলেও- এমনটাই নাকি বার্তা দেওয়া মেদিনীপুর জেলা যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে সরাসরি কিছু স্বীকার করতে না চাইলেও, দলের জেলা যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ বললেন, “জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদমই সত্য কথা, হেলমেট হীন বাইক চালনার কারণে প্রতিবছর ২০০-৩০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে জেলায়। স্বভাবতই, এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। এটাও সত্য যে, শুধু দলের কর্মী নয়, বিভিন্ন পরিচিত মানুষজন পুলিশের কাছে ধরা পড়লে, আমাদের অনেককেই ফোন করে, পুলিশ-কে অনুরোধ করতে বলেন। এর থেকে ভালো নয় কি, হেলমেট পরে বাইরে বেরোনো! তাই, আমরা জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত-কে স্বাগত জানাচ্ছি।” উল্লেখ্য যে, জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ৩৮৪ টি পথ দুর্ঘটনায় ৪২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে এখনও পর্যন্ত ২৮৯ টি পথ দুর্ঘটনায় ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর অধিকাংশই হেলমেট না থাকার কারণে বলে জানা গেছে!