দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ অক্টোবর: না, ‘গল্প’ নয়। সত্যি। বলা ভালো, নিষ্ঠুর এক সত্যি! চাকরি পাওয়ার কথা ১৯৯৬ সালে। সেই চাকরি পেলেন ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর। মাঝখানের ২৫ বছর? আদালত আর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চৌকাঠে দৌড়ে দৌড়ে চটি ছিঁড়ে গেছে বলরাম বসন্ত, নিত্যানন্দ দোলই, বিমল হারা, অশোক কুমার গড়াই-দের। অবশেষে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই- এর সহৃদয়তায় তাঁরা চাকরি পেলেন কেউবা ৫২ বছর বয়সে, কেউবা ৫০ আর কেউবা ৫৬ বছরে। আরও বিস্ময়কর যে, একজন শিক্ষিকার চাকরি আছে মাত্র ১৫ মাস! অর্থাৎ, ৫৮ বছর ৯ মাস বয়সে তিনি চাকরিতে যোগদান করলেন। সোমবার সন্ধ্যায় এরকম ১১ জনের হাতেই ‘নিয়োগপত্র’ তুলে দিলেন কৃষ্ণেন্দু বাবু। সঙ্গে ছিলেন বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তরুণ সরকার। নবনিযুক্ত শিক্ষকদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার সাথে সাথেই মিষ্টি মুখ করালেন কৃষ্ণেন্দু। নতুন চেয়ারম্যানের মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়েও, দু’চোখে তাঁদের শুধুই জল!

thebengalpost.net
৫৫ বছর বয়সে প্রাথমিকে শিক্ষকতার নিয়োগপত্র পেলেন :

thebengalpost.net
তুলে দেওয়া হল নিয়োগপত্র :

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্যানেলে সংরক্ষিত (SC/ST) তালিকায় নাম ছিল অশোক কুমার বেরা, অশোক কুমার গড়াই, মেনকা মুন্ডা, বলরাম বসন্ত, নিত্যানন্দ দোলই, বিমল হারা সহ ১১ জনের। কিন্তু, তাঁদের নিয়োগ না করে, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ জেনারেল (সাধারণ) তালিকা থেকে অতিরিক্ত ১১ জনকে নিয়োগপত্র দিয়ে দেন। ফলে, বঞ্চিত হন অশোক, নিত্যানন্দ, মেনকা, বিমল- প্রমুখরা! কলকাতা হাইকোর্টে তাঁরা মামলা করেন। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেই মামলার অর্ডার বা বিচার পান ২০১৭ সালে। এরপর, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের তরফে নানা অজুহাত বা আইনী জটিলতার বিষয় তুলে ধরে গড়িমসি করা হয়। ফের তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হন। সম্প্রতি, তাঁদের দ্রুত নিয়োগ করার কথা বলা হয়। না, এবারের চেয়ারম্যান আর গড়িমসি করেননি বা কোনো অজুহাত দেননি! বরং, নিজে উদ্যোগী হয়ে, ফাইল খুঁজে বের করিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন। মাত্র ১৫ দিন হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া, বছর ৪২ এর কৃষ্ণেন্দু বিষই সোমবার সন্ধ্যায় যখন ৫০-৫৫ বছর বয়সী অশোক কুমার গড়াই, মেনকা মুন্ডা-দের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছেন, তখন তাঁর চোখেও জল! আর, কৃষ্ণেন্দু-কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ভাসালেন অশোক, বিমল, মেনকা, বলরাম, নিত্যানন্দ-রা। তাঁদের মুখে একটাই কথা, “এরকম চেয়ারম্যান যদি আগে পেতাম, জীবন আর পরিবারের অমূল্য ২৫ টা বছর নষ্ট হতো না! সবকিছুই কত সুন্দর হতো!” একধাপ এগিয়ে বছর ৫৬’র অশোক কুমার গড়াই বললেন, “উনি আমাদের কাছে ভগবান!” আর, ৫৯ (৫৮ বছর ৯ মাস) এর মেনকা মুন্ডা বিষই বললেন, “এই বয়সে এসেও দিদিমণি ডাক শুনতে পাব, এটাই প্রাপ্তি!” কৃষ্ণেন্দু কিছু বলতে চাইলেন না! আক্ষেপের সুরে বললেন, “নিজের কর্তব্য টুকুই করেছি। আরও আগে হলেই বোধহয় ভালো হতো!” সবশেষে, মিষ্টি মুখ করিয়ে “মধুরেণ সমাপয়েৎ” করতে অবশ্য ভুললেন না কৃষ্ণেন্দু।

thebengalpost.net
চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই মিষ্টি মুখ করালেন নবনিযুক্ত শিক্ষকদের :

(প্রাথমিকভাবে তথ্যের সামান্য ভুল ছিল, তা ঠিক করা হয়েছে।)