সুদীপ কুমার খাঁড়া, মেদিনীপুর, ১৪ এপ্রিল:করোনা ভাইরাসের (Covid 19) সংক্রমণে জলবায়ুর প্রভাব কতখানি? প্রথম থেকেই এই জিজ্ঞাসা আছে আমজনতার মনে। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের (Second Wave) সময়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে COVID-19 সংক্রমণের উপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন জেলা শহর মেদিনীপুরে অবস্থিত, মেদিনীপুর সিটি কলেজের (Midnapore City College) বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপকরা। সম্প্রতি সেই গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন ড. সব্যসাচী পালের নেতৃত্বে পাঁচজন ভারতীয় গবেষক। বৈজ্ঞানিক ফলাফলগুলি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জার্তিক গবেষণাপত্র “Environmental Research” প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এর আগে, মেদিনীপুর সিটি কলেজের বিজ্ঞানীদের এই দল দেখিয়েছিল যে, ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ (যার জন্য প্রায় 0.45 million লোক মারা গিয়েছিলেন), মূলত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময় অনিয়ন্ত্রিত প্রচারের কারণেই শুরু হয়েছিল।

thebengalpost.net
ড. সব্যসাচী পাল :

প্রসঙ্গত, বৈজ্ঞানিকেরা এর আগে, COVID-19 এর প্রাথমিক তথ্য ব্যবহার করে সংক্রমিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিবেশগত কারণ (environmental parameters) গুলির সাথে, পারস্পরিক সম্পর্কের সন্ধান করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনোও নিশ্চিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। COVID-19 এর সংক্রমণ হার এবং পরিবেশগত কারণগুলির তারতম্য নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও গবেষণা নেই। সংক্রমণ হার হল, মহামারীর বিস্তারের ড্রাইভিং প্যারামিটার। ড. পালের নেতৃত্বে গবেষকরা সময়-নির্ভর মহামারী সংক্রান্ত মডেল SIRD এবং SEIRD ব্যবহার করে বিভিন্ন পরিবেশগত ফ্যাক্টর এর সাথে COVID-19 ভাইরাসের সংক্রমণ কি করে বাড়ে বা কমে, তা প্রমান করেছেন। COVID-19 এর সংক্রমণ হার বেশিরভাগ ভারতীয় রাজ্যের আপেক্ষিক এবং পরম আর্দ্রতার সাথে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক (negative correlation) দেখায়। এর থেকে বোঝা যায় যে, ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যের ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক এবং পরম আর্দ্রতা বৃদ্ধির সাথে COVID-19 সংক্রমণ হ্রাস হয়। অন্যদিকে, গড় বায়ু তাপমাত্রার সাথে COVID-19 এর সংক্রমণ হারের ইতিবাচক সম্পর্ক (positive correlation) আছে। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, গড় বায়ু তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশগত কারণগুলি ছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক কারণ, যেমন- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, টিকা, সামাজিক যোগাযোগ ইত্যাদি ভাইরাসের বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, পরিবেশগত পরিবর্তনশীলতা, বিশেষ করে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা, মহামারী বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, অন্যান্য সামাজিক কারণ, যেমন- সামাজিক যোগাযোগ, সরকারি হস্তক্ষেপ, লকডাউন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, অভিবাসনের ধরণগুলির তুলনায় তাদের প্রভাব কম। শুধুমাত্র, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা রোগ সংক্রমণকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই, সরকারের উচিত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও টিকাদানের ওপর বেশি জোর দেওয়া।