দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: অতিমারী আবহে স্কুল বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস নিতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মাসের শেষে কোথাও যেন মনে হচ্ছে দায়িত্ব-কর্তব্য অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে! সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষকদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য তো শুনতে হচ্ছেই- “স্কুলে না গিয়েও বেতন মিলছে!” না, শুধু সমালোচনার কারণে নয়, শিক্ষক সুলভ মানবিক দায়বদ্ধতা পালনের আন্তরিক তাগিদ থেকেও, শিক্ষার্থী ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাই, অতিমারী পরিস্থিতিতে নিজেদের মাস মাইনের টাকায় মানবসেবা তথা সমাজসেবার পথ বেছে নিয়েছেন অনেকেই! কখনও ব্যক্তিগতভাবে, কখনও সংগঠনগত ভাবে, আবার কখনও এক একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মিলিতভাবে। করোনা যুদ্ধে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবার এগিয়ে এলেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেলদা গঙ্গাধার অ্যাকাডেমির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী বৃন্দ। স্কুল সংলগ্ন একাধিক গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিজেদের বেতনের টাকায় তাঁরা ৫ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার (অক্সি ফ্লো মিটার সহ), পালস অক্সিমিটার, মাস্ক, স্যানিটাইজার পিপিই কিট প্রভৃতি কিনেছেন। গ্রামে গ্রামে সেই পরিষেবা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, অসহায় করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলি যদি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করেন, তবে পৌঁছে দেওয়া হবে ওষুধ, পথ্য সহ খাওয়ার-দাওয়ারও। এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। শুক্রবার থেকে তাঁরা এই ধরনের পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করলেন। এই কর্মসূচির নাম তাঁরা দিয়েছেন- “পাশে আছি”। শুক্রবার তা উদ্বোধন করলেন স্থানীয় বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট। উপস্থিত এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আধিকারিকরা।
শুক্রবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র আচার্যের নেতৃত্বে, বিদ্যালয় সংলগ্ন রাণাপাড়া সহ দু’একটি গ্রামে গিয়ে শিক্ষকরা প্রায় ২০০০ মাস্ক, স্যানিটাইজার প্রভৃতি তুলে দেন শ্রমিক ও দীনমজুর অধ্যুষিত এই গ্রামের বাসিন্দাদের হাতে। গ্রামের মানুষদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অক্সিজেন ও খাওয়ার-দাওয়ারের প্রয়োজন হলেই তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজন ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, “আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের বেতনের একটা অংশ থেকেই ৫ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, যারা এই পরিষেবা দিতে যাবেন তাদের জন্য পিপিই কিট কিনে নিয়েছি। এই এলাকার মানুষের যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেই, সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই পরিষেবা দেওয়া হবে। এছাড়াও, বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে গিয়ে, আমরা বাসিন্দাদের হাতে মাস্ক-স্যানিটাইজার তুলে দেব আগামী এক মাস ধরে। ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রামগুলিতেও যাওয়া হবে। আজ আমরা দারিদ্র্য পীড়িত একটি গ্রাম বেছে নিয়েছিলাম।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র আচার্য যোগ করেন, “অতি মারি পরিস্থিতিতে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। বিভিন্ন মানুষ কষ্টের মধ্যে আছেন। তাই করোনা আক্রান্ত কোনও পরিবার যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, তবে আমরা বিনামূল্যে খাওয়ার দাওয়ার সহ ওষুধ ও পথ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।” জেলার অন্যতম সেরা স্কুল বেলদা গঙ্গাধার অ্যাকাডেমি’র শিক্ষকদের এই মানবিক উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী, অনুপ্রাণিত শিক্ষক মহল!