দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ আগস্ট: ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত সাড়ম্বরে! চন্দ্রযান কিংবা মহাকাশযান পাঠাচ্ছে আমাদের দেশ ভারত। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্ট্যাচু, সংসদ ভবন আরও কত কি! শিশুকন্যাদের জন্য দেশে “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও”, আর রাজ্যে “কন্যাশ্রী”র মতো প্রকল্প। কিন্তু, পড়ার যোগ্য হওয়ার আগেই যদি আমাদের ‘বেটি’ বা ‘কন্যা’ কিংবা সন্তানেরা না খেতে পেয়ে বা অপুষ্টিতে তলিয়ে যায় গভীর অন্ধকারে? ১৩০ কোটির দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের “মাহেন্দ্রক্ষণে” এই উত্তর দেওয়ার সময় কারুরই নেই! তাইতো, মেদিনীপুরের এক “ভারতমাতা” নিজের ১ দিনের সদ্যজাতা শিশুকন্যা-কে লালন করতে পারবেন না বলেই, অন্যের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে সামান্য কিছু অর্থ পেয়েছিলেন কিনা বা দাবি করেছিলেন কিনা তা এখনও প্রমাণিত হয়নি! তবে, শনিবারের ঘটনায়, মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালী থানা থেকে বেরিয়ে শিশু কল্যাণ কমিটির (CWC) সদস্যা অনিন্দিতা শূর স্পষ্ট জানালেন, “আর্থিক যোগ বা লেনদেনের কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। ওই মহিলা লালন-পালন করতে পারবেন না বলেই, পরিচিত এক পরিবারের নিজের সদ্যোজাতা সন্তানকে রেখে এসেছিলেন!”

thebengalpost.in
অসহায় ওই মা ও তিন সন্তান (ছবিতে নেই সদ্যজাতা) :

যদিও, গতকাল ওই মহিলার প্রতিবেশীরা অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশু কন্যা’কে উনি বিক্রি করেছিলেন! সেই অভিযোগ যদি আংশিকভাবে সত্যি হয়ও, মাত্র ৪-৫ মাস আগে স্বামীকে হারানো ৪ সন্তানের মা যে নিজের চতুর্থ সন্তান-কে ‘স্বভাবে’ নয়, ‘অভাবে’র দায়েই অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তা বলাই বাহুল্য! কারণ, পাতা কুড়ানির কাজ করে হলেও ইতিমধ্যে ওই মহিলা নিজের অন্য ৩ সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। হয়তো নিজের ইচ্ছেতে নয়, অশিক্ষা আর অজ্ঞতার কারণেই চতুর্থ সন্তান গর্ভে এসে গিয়েছিল তাঁর। এক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে এখনও সম্পূর্ণভাবে সচেতনতা বা শিক্ষামূলক বার্তা কেন এই সমস্ত পরিবারে পৌঁছে দেওয়া যায়নি! এরপর, গর্ভাবস্থাতেই স্বামীকে হারান ওই মহিলা। অভাবের সংসারে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে আলাদা করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ভূমিষ্ঠ হয় কন্যা শিশু। তার একদিন পরেই এই সিদ্ধান্ত নেন নেহাতই শিক্ষা-দীক্ষা হীন, অসহায় ওই মহিলা। তাই, অভিযোগ পাওয়ার পর সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে কোতোয়ালি থানা ও শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা ওই মহিলা-কে “ক্ষমা” করে দেন! উদ্ধার করা হয়েছে সদ্যজাতা শিশুকন্যা-টিকে। আপাতত, ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের পুণ্যলগ্নে মেদিনীপুরের ওই “অসহায় ভারতমাতা” ও তাঁর সদ্যজাতা-র ঠাঁয় হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে!