দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৩ জুলাই: “দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-ই। গ্রেপ্তার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা!” ঠিক দু’মাস আগে, ২১ মে একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল বেঙ্গল পোস্ট ডিজিটাল মাধ্যমের পক্ষ থেকে। কারণ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই (২০১২-‘১৩) স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ‘বেনজির’ দুর্নীতি শুরু হয়েছিল। জেলায় জেলায় কান পাতলেই শোনা গেছে, “প্রাইমারিতে ১০ লক্ষ, আপার প্রাইমারিতে ১৪ আর হাই স্কুলে ১৬-১৭ লক্ষের নিচে চাকরি হবেনা। তা সে যত নম্বর-ই থাকনা কেন!” প্রথমটাতে ‘গুজব’ মনে হলেও, ধীরে ধীরে তাই ‘ধ্রুব-সত্য’ বলে প্রমাণিত হয়। হাজার হাজার যোগ্য এবং উচ্চ মেধাসম্পন্ন চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত হতে হয়। চোখে জল আর বুকে ব্যথা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন আর অনশনে নামতে বাধ্য হন তাঁরা। আর, মানিক-পার্থরা টিভির সামনে বসে মন্তব্য করতে থাকেন, “মেধার ভিত্তিতে চাকরি হয়েছে! চাকরি কি হাতের মোয়া, সবাই পাবে। যতই আন্দোলন করুক চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়!” আসলে তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন, “ফেলো কড়ি মাখো তেল!” এভাবেই, কেটে যায় প্রায় ৮-১০ বছর। অবশেষে, কলকাতা হাইকোর্টের শিক্ষা সংক্রান্ত বেঞ্চের বিচারপতি হয়ে এলেন ‘বঞ্চিতদের মসীহা’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

thebengalpost.net
টানা ২৬ ঘন্টা জেরার পর গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আটক অর্পিতা মুখোপাধ্যায় :

২০২১ সাল থেকে একের পর এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী নির্দেশ দিতে থাকেন তিনি। টলে যায় শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতির কুর্সি’! ভাঙতে শুরু করে ‘ঘুঘুর বাসা’! বুঝিয়ে দেন, এই দুর্নীতি সমূলে উৎপাটিত করাই তাঁর লক্ষ্য। তাই মন্তব্য করেন, “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র”, “পার্থর কুকুরের নামে নাকতলায় ফ্ল্যাট আছে”, “৫০০ কোটির দুর্নীতি”, “আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষ করবনা”, “যোগ্য ও বঞ্চিতদের চাকরি পাইয়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য”- প্রভৃতি। তাঁকে সমর্থন করেন, তৃণমূল সরকারের আমলে মনোনীত প্রথম স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল সহ অনেকেই। অভিজিৎ বাবু-কে ‘সাহস’ জুগিয়েছেন মমতার আমলের প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিবিআই অধিকর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস সহ আরও অনেকে। আর, লড়াই করে গেছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, বিক্রম ব্যানার্জি, ফিরদৌস শামিম- প্রমুখরা। অবশেষে প্রমাণিত হল, “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আর নজিরবিহীন দুর্নীতির” বিষয়টি। এখন প্রশ্ন একটাই- পার্থ’র এক বান্ধবীর কাছ থেকে যদি ২১ কোটি টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার হয়, একাধিক ফ্ল্যাট যদি তাঁর নামে থাকে; উঠে আসে মোনালিসা দাস সহ আরও একাধিক মহিলার নাম, যাঁরা নাকি ৮-১০ টি করে ফ্ল্যাটের মালিক; যাঁরা নাকি মন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন- সেক্ষেত্রে খোদ সেই মন্ত্রী বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা আরও কত কোটি কোটি টাকার মালিক? এজন্যই কি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করেছিলেন, “পার্থর কুকুরের নামে ফ্ল্যাট আছে!” পরামর্শ দিয়েছিলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়-কে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। আজ সেই প্রক্রিয়াও বাধ্য হয়ে শুরু করল মমতার মন্ত্রীসভা!

thebengalpost.net
পার্থকে সরানো হবে মন্ত্রীত্ব থেকে: