thebengalpost.net
মা ও পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে :

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (Calcutta National Medical College and Hospital) থেকে MBBS পাস করার পর, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে পেডিয়াট্রিকস (Pediatrics) এর উপর MD (PGT- 2nd Yr) করছিলেন। কৃষক বাবার সেই ‘বিদূষী কন্যা’ নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর পরিবারের ‘স্বপ্নপূরণের কান্ডারী’ হয়ে ওঠার হাতছানি নিমেষে উপেক্ষা করে, মৃত্যুকেই ‘বরণ’ করে নিলেন! ২৭ বছরের তরুণী চিকিৎসক লিখে গেছেন সুইসাইড নোটও। কিন্তু, তাতে কোন ‘গোপন বেদনা’র কথা উল্লিখিত হয়েছে, তা এখনও ‘অজানা’ সকলের কাছে! মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির এক সাধারণ পরিবার থেকেই উঠে এসেছিলেন মিনি। ছোটো থেকেই মেধাবী ছিলেন। তাই, জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে MBBS পড়ার সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন। তারপর এম.ডি (MD)। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। পেশাগত দায়িত্ব বা পড়ুয়া চিকিৎসক হিসেবে স্বাভাবিক কাজের চাপ ছাড়া, কোথাও কোনো সমস্যার কথা জানা ছিলোনা কারুরই! মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে চারটা-পাঁচটা নাগাদও ফোনে কথা হয়েছিল, বাবা-মা’র সঙ্গে। স্বাভাবিক কথাবার্তাই হয়েছিল, জানালেন বাবা বিনয় কুমার ঘোষ। তারপরই ছন্দপতন রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ! বুধবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে বিনয় বললেন, “রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ কলেজের তরফে ফোন করে জানানো হয়, আপনারা যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন। বিশ্বাস করুন, কিছুই বুঝতে পারছিনা। কোথা থেকে কি হয়ে গেল! সবকিছুই তো ঠিকঠাক ছিল। মাস তিনেক আগে বাড়ি গিয়েছিল, তবে প্রতিদিনই দিনে দু’বার করে ফোনে কথা হত, কিছুই বুঝতে পারিনি! দু’একদিনের মধ্যেই বাড়ি যাওয়ারও কথা ছিল। মঙ্গলবার বিকেলেও ফোনে সেকথা জানিয়েছিল”। না, কারুর উপর কোনো সন্দেহ, অভিযোগ কিছুই নেই বিনয় বাবু কিংবা তাঁর পরিবারের। মা, মামা, মাসী, মেসো খবর পেয়ে সকলেই মুর্শিদাবাদ থেকে বুধবার সকালে এসে পৌঁছেছেন মেদিনীপুরে। আশ্চর্য এক ‘ধোঁয়াশা’ আর সব হারানোর বেদনা ঘিরে আছে তাঁদের! উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট আপাতত পুলিশের দখলে। হয়তো সেখান থেকে কিছু রহস্য উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করছেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে বাবা-মা।

thebengalpost.net
চিকিৎসক মিনি ঘোষ (ছবি- ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) :

thebengalpost.net
কলেজ হোস্টেল :

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাত্রি দশটা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উল্টোদিকের গালর্স হোস্টেলের রুম থেকে উদ্ধার হয় মিনি ঘোষ (Mini Ghosh) নামে বছর ২৭ এর ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে পিজিটি ২য় বর্ষের (PGT 2nd Yr, in the Dept. of Pediatrics) পড়ুয়া ছিলেন ওই তরুণী। বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকায়। প্রাথমিকভাবে মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা বলে অনুমান করা হলেও, ‘কারণ’ নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’তৈরি হয়েছে। মিনির রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে বলে মেডিক্যাল কলেজ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার মেডিক্যাল কলেজেই ময়নাতদন্ত হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা! বিভাগীয় অধ্যাপকদের মুখে শুনেছি ভালো স্টুডেন্ট ছিল মিনি। জানিনা, কোন অবসাদ থেকে এরকম করে বসল! এতো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এমনকিছু প্রেসারও ছিলনা! পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। ওর বাবা-মা’র সামনে তা খোলার কথা। দেখা যাক কি লেখা আছে!” কিন্তু, পড়ুয়া চিকিৎসকদের অবসাদ কাটানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হবে? ডাঃ কুন্ডু বললেন, “সাইক্রিয়াটিক কাউন্সেলিং এর বিষয়ে উদ্যোগ নেব।” অন্যদিকে, শিশু বিভাগের (Pediatrics) প্রধান তথা আইএমএ-র জেলা সভাপতি ডাঃ তারাপদ ঘোষ জানিয়েছেন, “অত্যন্ত শান্তশিষ্ট ও সচেতন পড়ুয়া ছিল মিনি। সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করত। কলেজের রাজ্য স্তরের সেমিনার নিয়েও সিরিয়াসলি এবং অ্যাক্টিভলি কাজ করছিল। তবে, ও একটু অন্তর্মুখী বা ইন্ট্রোভার্ট (Introvert) ছিল। একটু চুপচাপ থাকত। তবে, নিজের কাজের বিষয়ে সর্বদা সচেতন ছিল। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সবকিছু ছেড়ে কেন এরকম করল, আমরাও কিছু বুঝতে পারছিনা!” জীবনের প্রতি কোন ‘বিতৃষ্ণা’র কারণে, একজন সম্ভাবনাময় তরুণী চিকিৎসক নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর পরিবারের স্বপ্নপূরণের আনন্দ’কে ‘বিসর্জন’ দিয়ে, মৃত্যুকেই ‘আপন’ করে নিলেন, এখনও পর্যন্ত তা বুঝতে পারছেন না কেউই!

thebengalpost.net
বাবা বিনয় কুমার ঘোষ :

thebengalpost.net
মা ও পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে :