দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ২৯ জানুয়ারি: মেডিক্যালে ‘ভুয়ো’ জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে ভর্তি-দুর্নীতির মামলা সরানো হল কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এই মামলা শুনবেন তাঁরাই (সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ)। তিন সপ্তাহ পরে সব-পক্ষের লিখিত হলফনামার ভিত্তিতে শুরু হবে শুনানি। সোমবার জানিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের (একক বেঞ্চের) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ থেকে মামলার যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফে। কলকাতা হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চেই আপাতত এই মামলার আর শুনানি হবেনা। এই মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টেই। সোমবার জানিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়।

thebengalpost.net
বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়:

তবে, এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন, “কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চে যা হচ্ছে, তা ঠিক নয়! এর থেকে বেশি কিছু মন্তব্য আমরা করছিনা। তাতে হাইকোর্টের গরিমা নষ্ট হবে। তবে, আমরা অন্যভাবে এর সমাধান করব।” এর বাইরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সেনের ‘বেনজির সংঘাত’ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি প্রধান বিচারপতি ডিওয়আই চন্দ্রচূড় সহ বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি.আর গাভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস। তবে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিচারব্যবস্থার স্বার্থে অবিলম্বে এই ‘লড়াই’ বন্ধ হওয়া উচিত। তবে, রাজ্যের আইনজীবী ড. কপিল সিব্বল এবং অভিষেক ব্যানার্জির আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নানা ‘অভিযোগ’ এনে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ। তাঁর (অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের) এজলাস থেকে অন্যান্য মামলাগুলিও সরানোর ‘আবেদন’ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁর সেই প্রশাসনিক এক্তিয়ার রয়েছে। কোন বেঞ্চ কোন মামলা শুনবে, তা তিনিই ঠিক করবেন।”

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে অন্য একটি মামলায় আজ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই শেষমেশ ‘মান্যতা’ পেল। ১১,৭৬৫ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না। অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ তুলে নিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিমা কোহলির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। পর্ষদ ২০১৪ ও ২০১৭-তে টেট পাস প্রশিক্ষিত (ডি.এল.এড পাস)-দের নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে, টেট পাস এবং ২০২২ সালের নভেম্বরে ডিএলএড সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া প্রার্থীদেরও ইন্টারভিউ নিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। এই নির্দেশই দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, তা খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার (সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন)-র নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। পরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টও এতদিন নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে রেখেছিল। অবশেষে পর্ষদের আবেদন মেনে ‘স্থগিতাদেশ’ তুলে নেওয়া হল। সবমিলিয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সৌমেন সেনের সঙ্গে সরাসরি ও নজিরবিহীন সংঘাতের আবহে আজ, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক ক্ষেত্রেই ‘নৈতিক জয়’ হল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ! (ছবি- প্রতীকী ও সংগৃহীত।)