দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৭ মে: SSC চাকরি বাতিল মামলার চূড়ান্ত শুনানি এবং রায়দান করা হবে আগামী ১৬ জুলাই (২০২৪)। তার আগে অবধি চাকরি বহাল থাকছে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরই। যদিও, ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হলে চাকরি যাওয়ার সাথে সাথেই, ফেরত দিতে হবে বেতনও! আপাতত ১৬ জুলাই অবধি ‘অবৈধ’ বা ‘অযোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন ফেরতের উপর ‘স্থগিতাদেশ’ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি ম্যারাথন শুনানি শেষে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঠিক এমনই নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ। চাকরি বাতিলের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে.বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের ‘সর্বশেষ’ পর্যবেক্ষণ, “SSC সহ অনেকেই বলছেন যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার অযোগ্যদের (বিতর্কিতদের) চিহ্নিত করেছে। তাই, এত সংখ্যক (প্রায় ২৫ হাজার) চাকরি বাতিল করা ঠিক হবেনা। এমনটাই আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি। তবে, ১৬ জুলাই চূড়ান্ত শুনানি শেষে সবটা নির্ধারণ করা হবে।” একইসঙ্গে, সুপ্রিম কোর্ট সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণে এও জানিয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এসএসসি (SSC)-র পদ্ধতিগত ভুলের জন্যই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সম্পূর্ণ নিয়োগ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল!

thebengalpost.net
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ:

এর আগে মঙ্গলবার (৭ মে) শুনানির প্রথমার্ধে প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করেছিলেন, “সুপরিকল্পিত জালিয়াতি করেছে SSC!” অপরদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীরা বার বার দাবি করছিলেন, “আমরা যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করতে পারব। তাই, শিক্ষা-ব্যবস্থার স্বার্থে পুরো প্যানেল বাতিল করবেন না দয়া করে!” SSC এও জানিয়ে দিয়েছে- র‌্যাঙ্ক জাম্পিং, প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ এবং ওএমআর (OMR) কারচুপির মাধ্যমে যে ৮২৩৪ জনকে ‘নিয়োগ’ করা হয়েছিল তাদের তাঁরা চিহ্নিত করেছেন। আর এদের জন্য বাকি ১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়া ঠিক নয় বলেও SSC-র দাবি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং যোগ্য শিক্ষকদের আইনজীবীদের তরফেও একই দাবি করা হয়।

দ্বিতীয়ার্ধে যদিও, বিতর্কিত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আইনজীবীরা দাবি করেন, OMR উদ্ধার হয়েছে নাইসার প্রাক্তন আধিকারিক পঙ্কজ বনশলের গাজিয়াবাদের বাড়ি থেকে। ওই OMR-কে মান্যতা দিয়ে চাকরি বাতিল করা ঠিক হবেনা! যদিও, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ তাঁদের এই সওয়ালে গুরুত্ব দেননি। ‘বিতর্কিত’ চাকরিপ্রাপকদের সিনিয়র আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে কলকাতা হাইকোর্টের ‘প্রাক্তন’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-কে নিয়ে বলা শুরু করলে প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় কার্যত তাঁকে ‘ধমক’ দিয়ে বলেন, “ভুলে যাবেন না আপনি (বা, আপনারা) একজন আইনজীবী। আর এটা বিচারালয়। এখানে রাজনৈতিক নেতাদের মত মন্তব্য করা ঠিক নয়। মামলা বহির্ভূত বিষয় এখানে উত্থাপন করবেন না। আমরা তাহলে হাইকোর্টের সম্পূর্ণ রায় বহাল রেখে আপনাদের সমস্ত পিটিশন (SLP) খারিজ (ডিসমিস) করে দিতে বাধ্য হব।” এরপরই, বিচারপতি জে.বি পার্দিওয়ালা পুনরায় জানতে চান, “যোগ্য-অযোগ্য কি বাছাই করা সম্ভব?” এক্ষেত্রে, স্কুল সার্ভিস কমিশন সহ যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের তরফে জানানো হয়, “হ্যাঁ সম্ভব!” তারপরই, তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, “যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদ করা সম্ভব হলে, সবার চাকরি বাতিল করা ঠিক হবেনা!” একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ এও জানিয়ে দেয়, “বিতর্কিত বা অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের সাথে সাথেই বেতন ফেরত দিতে হবে। তবে, ১৬ জুলাই চূড়ান্ত শুনানির আগে অবধি বেতন ফেরত দিতে হবেনা।” ১৬ জুলাই মামলার চূড়ান্ত শুনানি এবং রায়দান করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারপতিরা। ততদিন অবধি ক্যাবিনেট বা রাজ্য মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে ছাড়া অন্যান্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিবিআই (CBI) তদন্ত চালিয়ে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

thebengalpost.net
মামলার চূড়ান্ত শুনানি ও রায়দান ১৬ জুলাই: