দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী অধ্যাপিকার! মৃত্যু হয়েছে তাঁদের গাড়ির চালকেরও। সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ হাওড়ার (উলুবেড়িয়ার) কুলগাছিয়া উড়ালপুলের উপর মুম্বই রোডে (১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে) ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ওই পথ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology) বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা (Assistant Professor) ড. নন্দিনী ঘোষ (৩৬) এবং পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Science) বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা (Assistant Professor) ড. মিশা রায় (৩৩)। তাঁরা মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University) থেকে নিজেদের প্রাইভেট গাড়িতে করে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন। কুলগাছিয়ার কাছে একটি ট্রেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডার টপকে এসে তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারলে দুমড়ে-মুচড়ে যায় ব্যক্তিগত চারচাকা বা প্রাইভেট গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালক সহ দুই অধ্যাপিকার মৃত্যু হয়! মৃত চালকের নাম বিশ্বজিৎ দাস (৩১)। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ট্রেলারের চালক। এদিকে, মঙ্গলবার (২২শে শ্রাবণ/৮ আগস্ট) ‘কবি প্রয়াণ’-এর দিন সাত-সকালে এই মর্মান্তিক খবর এসে পৌঁছনোর পরই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়া সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই।

thebengalpost.net
দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অধ্যাপিকাদের গাড়ি :

জানা গেছে, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা নন্দিনী ঘোষের (Dr. Nandini Ghosh) বাড়ি হুগলির কোন্নগরে। অপরদিকে, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা মিশা রায়ের (Dr. Misha Roy) বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। নিহত গাড়ির চালক বিশ্বজিৎ দাসের বাড়ি হুগলির কোন্নগর কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক্রবর্তীনগরে। অন্যান্য দিনের মতোই নন্দিনীর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে উলুবেড়িয়া-কুলগাছিয়া মুম্বই রোডে উড়ালপুলে। পুলিশ জানায়, এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুম্বই রোড ধরে কলকাতার দিকে ফিরছিলেন দুই অধ্যাপিকা। সেই সময় উল্টোদিকে কুলগাছিয়া উড়ালপুলের উপর কোলাঘাটমুখী (বা, খড়্গপুরমুখী) একটি ট্রেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডার পার করে অন্য লেনে চলে আসে। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখে পড়ে অধ্যাপিকাদের গাড়ি। সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের! দুর্ঘটনার পরই নিহতদের পরিবারে খবর দেওয়া হয়। রাত্রি সাড়ে ৯টা নাগাদ উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেহ শনাক্ত করেন নন্দিনীর পরিবারের লোকেরা। এরপরই দেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

নন্দিনীর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা জানান, এদিন বিকেল ৫টা নাগাদ ফোন আসে মেয়ের। জানিয়েছিলেন, সবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোলেন। নিয়মিত গাড়িতে করেই যাতায়াত করতেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপিকা নন্দিনী। সোমবার রাত্রি সাড়ে ৮টা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন বাড়ির লোকজন। মেয়ে ফোন না ধরায়, খটকা লেগেছিল বাড়ির লোকজনের! লালবাজার কন্ট্রোল রুমেও যোগাযোগ করেন তাঁরা। এরপর, রাত্রি ৯টা নাগাদ ফোন আসে। জানানো হয় দুর্ঘটনার কথা! উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ইয়ং সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডে (Young Scientist Award) ভূষিত হয়েছিলেন অধ্যাপিকা নন্দিনী ঘোষ। অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের (Distance Education) পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতিশ্রুতি সম্পন্না অধ্যাপিকা মিশা রায়। মাত্র ৩৩-৩৪ বছর বয়সেই এই দুই কৃতি অধ্যাপিকার মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলা সহ রাজ্যের শিক্ষা মহলে! হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নিবন্ধক সহ আধিকারিক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে। শোকস্তব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এদিন (মঙ্গলবার) সকালে নীরবতা পালনের পর বেলা দুটো (2pm) থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে, আগামী ৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী।

thebengalpost.net
অধ্যাপিকা ডঃ নন্দিনী ঘোষ (বামদিকে, ছবি- সংগৃহীত) :

thebengalpost.net
অন্যান্য অধ্যাপিকাদের সঙ্গে ডঃ মিশা রায়: (ছবি- সংগৃহীত)