দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: “দাদু বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন…!” চোখে জল রিয়ার। মাত্র ২ নম্বরের জন্য মেধাতালিকায় জায়গা হয়নি। সেই আক্ষেপটাও আছে। যদিও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেয়েদের মধ্যে ‘প্রথম’ স্থান অধিকার করেছে রিয়াই। উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগ থেকে ৪৮৬ নম্বর (৯৭.২ শতাংশ) পেয়ে এবার রাজ্যেও ‘দ্বাদশ’ স্থান অধিকার করেছে সে। সেইসঙ্গে ঘাটাল মহকুমার সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকও নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা রিয়া দে-ই। স্বাভাবিকভাবেই রিয়াকে নিয়ে এখন ধন্য ধন্য করছে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য মেদিনীপুর! বৃহস্পতিবার রিয়াকে সংবর্ধিত করা হয়েছে ঘাটাল পৌরসভার তরফেও। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “নারী শিক্ষার অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য ঘাটালকে আরো একবার গর্বিত করল আমাদের রিয়া।” তবে, রিয়ার জীবনের ‘গল্প’ যে রূপকথাকেও হার মানায়, তা মানছেন মহকুমাশাসক।

রিয়ার জন্মের আগেই ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যায় তার বাবা সুকুমার দে। রিয়ার যখন দেড়-দু’ বছর বয়স, মা টুম্পা দে আবারও বিয়ে করে সংসার পাতেন। এরপরই রিয়াকে মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ঘাটাল মহকুমার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা, তথা রিয়ার দাদু (মায়ের বাবা) ক্ষুদিরাম জানা এবং দিদিমা গীতা জানা। গ্রামবাসীরা বলেন, “ওঁরা দু’জনই তো বাবা-মা’র দায়িত্ব পালন করেন। অনেক কষ্ট করে নাতনিকে মানুষ করেছেন দাদু, দিদিমা।” রিয়ার মতোই তাঁদেরও আক্ষেপ, “ওর দাদু মাসখানেক আগে মারা গেলেন। নাতনির এই রেজাল্টটা দেখে যেতে পারলেন না!” উচ্চমাধ্যমিকে কলা বিভাগে পড়েও ৯৭ শতাংশের বেশি নম্বর! মাত্র ২ নম্বরের জন্য রাজ্যের মেধাতালিকায় জায়গা হয়নি। তবে, রিয়া তার থেকেও বেশি দুঃখিত মাসখানেক আগে দাদু তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায়। মামাবাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে রিয়া বলে, “দাদু থাকলে খুব খুশি হতেন…!” গলা ধরে আসে রিয়ার। ইংরেজি নিয়ে পড়তে চায় সে। তার লক্ষ্য? রিয়া বলে, “নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, যাতে দিদিমাকে ভালো রাখতে পারি!” দাদু-দিদিমা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গৃহ শিক্ষকদের অবদানের কথাও স্মরণ করে দিয়া।
রিয়া জানায়, মাধ্যমিক পর্যন্ত সে পড়েছে নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলে। ওই স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী না থাকায়, রিয়া ভর্তি হয় ঘাটালের বিদ্যাসাগর হাইস্কুলে। বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতার কথা তুলে ধরলেও, তার জীবনের লড়াইতে নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান যে অপরিসীম তাও জানায় রিয়া। সে বলে, “নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখনও আমাকে সাহায্য করে চলেছেন।” ওই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক চিন্ময় আদক বলেন, “ওর জীবনের লড়াই তো আপনারা সকলেই জানেন! আমরা সর্বদা ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। সব দিক দিয়েই ও খুব ভালো মেয়ে। ইংরেজি নিয়ে কলকাতার যেকোন একটি ভালো কলেজে রিয়া পড়তে চায়। কিন্তু, বাধা তো আর্থিক অনটন! আমরা যথাসম্ভব পাশে থাকব। সেই সঙ্গে প্রশাসন বা সহৃদয় মানুষজনের কাছেও আবেদন জানাবো ওর পাশে থাকব জন্য।” ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “জীবনযুদ্ধে অনেক লড়াই করে ও আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। আমরা সর্বোতভাবে ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।”