দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জুন: শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে দেলুয়ার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৪ একর জমিতে অধ্যাপকের স্বপ্নের বাগান। নাম দিয়েছেন ‘ফরেস্ট পার্ক’। কি নেই সেখানে! আম, পেয়ারা, পেঁপে, মুসুম্বি, লেবু প্রভৃতি ফলের গাছ থেকে শুরু করে ফুল, সবজি, মাসরুম সহ হাজারো সম্ভার। মৌমাছি প্রতিপালন থেকে ভিলেজ টুরিজমের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে সেখানে। উদ্দেশ্য একটাই, শিক্ষিত যুব প্রজন্মকে বিকল্প আয়ের সন্ধান দেখানো। তরুণ অধ্যাপকের এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতিও। আর জঙ্গলের মাঝে অনুর্বর, পতিত জমিকেই উর্বর করে যিনি এই জাদু দেখাচ্ছেন, তিনি ঝাড়গ্রাম জেলার কাপগাড়ির সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক (Assistant Professor) ড. প্রশান্ত কুমার দাস। তাঁর জন্ম পূর্ব মেদিনীপুরের মেছেদায়। তবে, পড়াশোনা ও কর্মসূত্রে গত ২০ বছর ধরে থাকেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে। মেদিনীপুর শহরেরই উদ্যোগী কয়েকজন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘সৃজনী এগ্রো ফাউন্ডেশন’।

thebengalpost.net
মিয়াজাকি (রেড):

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই যুব সম্প্রদায়কে বিকল্প আয়ের সন্ধান দেখানো থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বছর খানেক আগে মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির কাছ থেকে ১৪ একর সরকারি জমি (খাস জমি) লিজ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন তরুণ অধ্যাপক প্রশান্ত। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে দেলুয়া সংলগ্ন এলাকায় (খয়েরুল্লাচক থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে) কার্যত জঙ্গলের মাঝে এক অনুর্বর, পতিত জমিই তাঁর হাতের জাদুতে হয়ে উঠেছে উর্বর। মাত্র এক বছরের গাছেই সেখানে ফলেছে জাপানের মিয়াজাকি আম (রেড ও পার্পেল দুই ধরনের), আমেরিকার রেড পালমার, দক্ষিণ আফ্রিকার রেড আইভরি আর ভারতের বিখ্যাত আলফানসো আম। এছাড়াও, বাগানের প্রধান আকর্ষণ ‘অলটাইম’ কাটিমন আম। একটু যত্ন নিলে সারা বছরই ফলে এই আম। আছে ঠিক কলার মতো দেখতে থাইল্যান্ডের বানানা ম্যাঙ্গোও। এছাড়াও, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে পেঁপে, বারুইপুর পেয়ারা, ভারতসুন্দরী কুল, মুসুম্বি, লেবু প্রভৃতি। আর এই সবকিছুই অধ্যাপক করছেন শুধুমাত্র জৈব সারের প্রয়োগে।

thebengalpost.net
রেড আইভরি:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

প্রশান্ত বলেন, “জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের যুব সম্প্রদায়কে এক নতুন দিশা দেখানোই আমার লক্ষ্য। তাই প্রকৃতির মাঝে পরিবেশ বান্ধব এই ‘ফরেস্ট পার্ক’ গড়ে তুলেছি। ১৪ একর জমিতে একটাও গাছ কাটিনি আমরা। বরং অনেক গাছ লাগিয়েছি। শাল, কাজু বাদামের গাছের মাঝেই আমাদের এই ফল-ফুল-সবজির বাগান। আর সেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহারের কথা ভাবতেই পারি না! তাই, জৈব সার প্রয়োগ করেই ফল ফলাচ্ছি আমরা। আর সেজন্যই আমাদের বাগানের ফলের স্বাদ, গন্ধ এবং গুনাগুনও অসাধারণ। এই এক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ অনুর্বর মাটিকে উর্বর করে, আমরা ফলাতে পেরেছি বহুমূল্য মিয়াজাকি আম। এছাড়াও, আছে একাধিক দেশি ও বিদেশি প্রজাতির আম। সবে এক বছর হয়েছে। তারমধ্যেই আমরা বাগানের পেঁপে ও ভারতসুন্দরী কুল বিক্রি করে সাফল্য ও প্রশংসা- দুইই পেরেছি। বাণিজ্যিকভাবে মাসরুম চাষও শুরু করেছি।” মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উর্মিলা সাউ বলেন, “২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে উনি (প্রশান্ত বাবু) আমার কাছে এই ফরেস্ট পার্কের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন। ওঁর স্বপ্ন আর পরিকল্পনা আমাদের মুগ্ধ করেছিল। উনি জঙ্গলমহলের অনুর্বর জমিতে বিকল্প চাষের তথা বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে চান। ভিলেজ টুরিজমেরও এক অসাধারণ ভাবনা আছে। চব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে উনি কাজ শুরু করেন। আমরা শুধু যতটুকু পারছি সহযোগিতা করে চলেছি।” শীতকালে এই বাগান ফুলে ফুলে ভরে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রশান্ত ও উর্মিলা দু’জনই। গত এক বছর ধরে এই বাগানে প্রতিদিন ১৪-১৫ জন স্থানীয় মানুষজন কাজ করে চলেছেন। আগামীদিনে মৌমাছি প্রতিপালন ও ভিলেজ টুরিজমের পরিকল্পনা সম্পূর্ণতা পেলে আরও অনেকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন প্রশান্ত। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কটেজ গড়ে তোলা হয়েছে এই ফরেস্ট পার্কে। মাটি আর খড় দিয়ে তৈরি কটেজেও গ্রাম্য পরিবেশের ছোঁয়া। সবমিলিয়ে জঙ্গলের মাঝে কৃষি ও পর্যটনে এক নতুন বিপ্লব আনাই তাঁর লক্ষ্য বলে জানান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার দাস।

thebengalpost.net
মিয়াজাকি (পার্পেল):

thebengalpost.net
বানানা ম্যাঙ্গো:

thebengalpost.net
ড. প্রশান্ত কুমার দাস: