দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: শিলাবতী নদীর উপর রেলওয়ে ব্রিজ। তার উপরই শিলাই হল্ট। একপ্রান্তে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা স্টেশন (আদ্রা ডিভিশন), অপরপ্রান্তে বাঁকুড়ার পিয়ারডোবা স্টেশন। নির্জন বা নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত সেই শিলাই হল্টেই রেললাইনের উপর হঠাৎ বিকট ‘শব্দ’ শুনে রবিবার বিকেলে থমকে যায় ভুবনেশ্বর-নিউ দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস! রবিবার বিকেল ঠিক ৪টা ১১ মিনিটে ডাউন লাইনে ১৭৭/২৮ পোস্টের কাছে এই ঘটনা ঘটার পরই আপ লাইনে থাকা রাজধানী এক্সপ্রেস ব্রিজের উপর ৪টা ১২ থেকে ৪টা ১৪ মিনিট অবধি থমকে যায়! তারপর বেশ কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে পিয়ারডোবা স্টেশনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই চালক বা লোকো পাইলট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিত রিপোর্ট দেন। রিপোর্টের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়। স্নিফার ডগ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন আদ্রা ডিভিশন ও খড়্গপুর ডিভিশনের রেলওয়ে আধিকারিক ও রেল পুলিশের আধিকারিকরা। প্রাথমিকভাবে রেল পুলিশের তরফে ঘটনাস্থল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হলেও, সোমবার বিকেলে ৪টা ৪৫ নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের দুই সদস্যের ফরেন্সিক দল। প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট ধরে তাঁরা ঘটনাস্থল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ছাড়াও, নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি থেকে আসা বিভাগীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ড. দেবাশীষ সাহা বলেন, “আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার পরই বোঝা যাবে, বিস্ফোরণ কিনা!” যদিও, গ্রানাইট পাথরের উপর সাদা আস্তরণ পড়ে যাওয়া ‘নমুনা’ দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফরেন্সিক দল একপ্রকার নিশ্চিত কিছু একটা ‘বিস্ফোরণ’ হয়েছে। তবে তা ঠিক কি ধরনের, তা নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন! এদিকে, আজ, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট)-ই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

thebengalpost.net
ফরেন্সিক টিম:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

শান্ত, নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত শিলাই হল্ট থেকে কয়েকশ মিটার দূরে, নদীর এপারে মেটিয়াবাড়ি গ্রাম। আর নদীর ওপারে বড় রঘুনাথপুর ও ছোট রঘুনাথপুর গ্রাম। পড়ন্ত বিকেলে রবিবার ঠিক কি ঘটেছিল, তা নিয়ে সন্দিহান গ্রামবাসীরা। তবে একসময় জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতার স্মৃতি এখনো তাঁদের হৃদয়ে টাটকা। আর সেইসব দিন তাঁরা ফিরে পেতে চান না! প্রত্যন্ত এই গ্রামের বাসিন্দারা হয়তো জানেনও না রবিবার পর্যন্ত ছিল মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহ। ওইদিন ওড়িশাতে নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে। তবে, এই ঘটনার সাথে বা বিকট শব্দের সাথে মাও-নাশকতার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন সূত্রে। যদিও, হঠাৎ কেন রেললাইনে বিকট ‘শব্দ’ হলো বা রবিবার বিকেল থেকে ব্যাপক বৃষ্টির পরও কালো গ্রানাইট পাথরের উপর পড়া সাদা আস্তরণ আসলে কিসের? সেই উত্তর পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। রেললাইনে কাজ চললে বা কোন এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে (রেললাইনে ফাটল সহ বিভিন্ন কারণে) যে ডিটোনেটর ফাটানো হয়, এক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনাও নেই। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে ডাউন লাইন দিয়ে একটি মালগাড়ি গিয়েছিল। ৪টা ১১ মিনিটে আপ লাইনে গিয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেস। কোন বিপজ্জনক সংকেত থাকলে ৩টা ৫৭ মিনিটেই ডিটোনেটর বিস্ফোরণ হওয়ার কথা! অনেকেই তাই এ প্রসঙ্গে ২০১০ সালের ২৮ মে-র জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

thebengalpost.net
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ:

সোমবার ফরেন্সিক দলের দুই সদস্য ঘটনাস্থলে এসে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ধরে নমুনা সংগ্রহ করার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ড. দেবাশীষ সাহা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “কিছুই বলা যাচ্ছে না এখনই। নমুনা সংগ্রহ করেছি, ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে।” রেলের এক গ্যাংম্যান জানিয়েছেন, “লাইনে ডিটোনেটর ব্যবহার করা হয় সমস্যার সংকেত দিতে। তবে এই ক্ষেত্রে ডিটোনেটরের ব্যবহার হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।” যদিও, রবিবার তিনি ডিউটিতে ছিলেননা বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। আদ্রা ডিভিশনের এডিআরএম খগেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, “রিপোর্ট পাওয়ার পর আমাদের কর্মীরা এলাকায় যান। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”

thebengalpost.net
তদন্তে রেল পুলিশ ও ফরেন্সিক দল:

thebengalpost.net
তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে সবকিছুই: