দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ আগস্ট: নার্সিংহোম তৈরিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের তীর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই। অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনেছে সবং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনা ঘিরে শোরগোল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে। সবং ব্লকের দেভোগ অঞ্চলের বেনেদিঘী এলাকার বাসিন্দা, বছর ৪৫-র দেবজ্যোতি দাসের অভিযোগ, নিজের কেনা জায়গার উপর তিনি দোতলা বাড়ি তৈরি করেছেন এবং সেই বাড়িতে একটি নার্সিংহোম তৈরির জন্য পাঁশকুড়ার এক ব্যক্তির (বা, সংস্থার) সাথে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। কিন্তু, সেই নার্সিংহোম তৈরিতেই বাধা দিচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এতে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীর মদত আছে বলেও অভিযোগ দেবজ্যোতি এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা’র। বাধ্য হয়েই শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সবং থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে দাবি দেবজ্যোতির। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের দাবি, ওই ব্যক্তি (দেবজ্যোতি) নিজেই ‘চুক্তি’ লঙ্ঘন করেছেন! আর এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্কও নেই। তবে, ঘটনা ঘিরে এলাকায় ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে, শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।

thebengalpost.net
তৈরি হচ্ছিল নার্সিংহোম:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

দেবজ্যোতির অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৩ সালে তিনি দেভোগ অঞ্চলের লুটুনিয়া মৌজায় ৭ ডেসিমেল জমি কিনেছিলেন জনৈক সুভাষচন্দ্র বেরার কাছ থেকে। পাশাপাশি যাতায়াতের রাস্তা সংক্রান্ত ব্যাপারেও একটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি রাস্তাটি বসবাস কিংবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আর সেজন্যই ওই জায়গায় ২০১৫ সালে তিনি একতলা বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দেন। এরপর, ২০২৩ সালে ওখানে নার্সিংহোম ও প্যাথোলজি করার জন্য একজনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং দোতলা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেই কাজ শেষ হওয়ার মুখেই ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে বাধা আসতে থাকে বলে অভিযোগ। এমনকি তৃণমূল নেতৃত্বের চাপে যাঁদের কাছে তিনি জমি কিনেছিলেন, তাঁদের এক অংশীদার তাঁকে উকিল মারফৎ চিঠিতে জানান যে, ওই বাড়িতে নার্সিং হোম বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনও ব্যবসা করা যাবে না। এরপরই বাধ্য হয়ে দেবজ্যোতির বৃদ্ধ বাবা-মা মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার সাথেও সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু, তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেবজ্যোতির মা সত্তোরোর্ধ্ব সন্ধ্যা দাস বলেন, “আমরা যাঁর কাজ থেকে জমি কিনেছি, তাঁরা আমাদের আত্মীয়। আবার তাঁরা মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ারও আত্মীয়। আমি মানসকে বলি, মানস নার্সিংহোম না হলে তো আমরা না খেতে পেয়ে মরে যাব! কিন্তু, উনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওখানে নার্সিংহোম করা যাবেনা।”

thebengalpost.net
অসহায় হয়ে আইনের দ্বারস্থ:

দেবজ্যোতির কথায়, “এই ব্যাপারে আমিও আইনি সাহায্য নিয়েছি। আইনি পদ্ধতি মেনেই এগোচ্ছি। আমি যদি আইন না মানি তাহলে স্বাস্থ্যদপ্তর আমায় অনুমতি দেবে না। কিন্তু, তৃণমূল কেন বাধা দেবে। আমিও তো তৃণমূলের হয়ে ভোটে সাহায্য করেছি।” ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবু কালাম বক্স, মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ INTTUC নেতা বিপুল মাইতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন দেবজ্যোতি। যদিও বিপুলের দাবি, “আমরা কেন বাধা দিতে যাব? সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। বরং যাঁদের নার্সিংহোম করার কথা, তাঁরাই তো নার্সিংহোম করবেননা বলে শুনেছি।” তৃণমূলের সবং ব্লকৃর সভাপতি তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ আবু কালাম বক্স বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের নাম জড়ানো বা মন্ত্রীর নাম জড়ানো প্রতিহিংসা ছাড়া কিছুই নয়। আসলে যাঁদের জমি উনি কিনেছিলেন, তাঁরাই জানিয়ে দিয়েছেন চুক্তিপত্র অনুযায়ী বাড়ির পাশের রাস্তা কোন ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আর এই বিষয়টি অন্ধকারে রেখেই উনি নার্সিংহোমের জন্য বাড়ি লিজ দিয়েছিলেন। সব জেনেশুনে তাই ওই ব্যক্তি (বা, সংস্থা) চুক্তিপত্র বাতিল করে, ওঁর (দেবজ্যোতির) কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়েছেন। এখন বিপদে পড়েই উনি আমাদেরকে দোষারোপ করছেন।” অন্যদিকে, বিজেপি-র জেলা সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, “আসলে ওই এলাকায় মন্ত্রীর একটা নার্সিংহোম তৈরি হচ্ছে। তাই উনি কাউকেই ওখানে নার্সিংহোম করতে দেবেন না। ওই ব্যক্তি অইনি সাহায্য চাইলে, আমরা সহযোগিতা করব।”

thebengalpost.net
এই রাস্তা নিয়েই সমস্যা: