দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: গত কয়েক বছরে সবুজায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে ভারত। স্থলজ কার্বনের পরিমাণও কমেছে অনেকটাই। কিন্তু, আশঙ্কার বিষয় হলো ভারতের ঘন জঙ্গল বা গভীর বনাঞ্চলগুলির স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। সেখানে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা (photosynthetic efficiency) হ্রাস পাচ্ছে ধীরে ধীরে। আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এলো এমনই চমকপ্রদ তথ্য। প্রতিষ্ঠানের সমুদ্র, নদী, বায়ুমণ্ডল ও ভূমি বিজ্ঞান কেন্দ্র (CORAL)-র অধ্যাপক প্রফেসর জয়নারায়ণন কুট্টিপুরথ এবং গবেষক রাহুল কাশ্যপের গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতের গভীর জঙ্গল বা বনাঞ্চলগুলিতে সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা, গত দশকের (২০০০ – ২০০৯ সাল) তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। পূর্ব হিমালয়, পশ্চিমঘাট এবং সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির নির্মল বনাঞ্চলে এই হ্রাস সবচেয়ে বেশি।

thebengalpost.net
আইআইটি খড়্গপুর:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

খড়্গপুর আইআইটি’র দুই গবেষক জানিয়েছেন, মূলত বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তেমনই মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পাচ্ছে। সেইসঙ্গেই বনজ-কার্বন (forest carbon)-এর জোগানও কমছে। এর ফলেই সালোকসংশ্লেষ (photosynthesis) প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটছে। এর সাথেই আছে আধুনিক সভ্যতার বিকাশ তথা মনুষ্য সৃষ্ট অত্যাচারও। পাহাড় ও জঙ্গল কেটে সভ্যতা গড়ে তোলা সহ প্রকৃতির উপর নানা অত্যাচারের ফলে ভূমিধস (Landslide), বায়ুমন্ডলীয় শুষ্কতা প্রভৃতিও বাড়ছে। জঙ্গলে আগুন লাগার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই সবকিছুর কারণেই গভীর বা ঘন জঙ্গলগুলির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। অধ্যাপক কুট্টিপুরথ বলেন, ঘন জঙ্গলে বা সুবৃহৎ বনাঞ্চলে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হবে। সর্বোপরি, সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের উপরই প্রভাব পড়বে। সালোকসংশ্লেষের অভাবে একদিকে যেমন ঘন জঙ্গলের গাছপালা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, ঠিক তেমনই এর ফলে পরিবেশে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জোগানও কমবে। প্রফেসর জয়নারায়ণন কুট্টিপুরথ বলেন, “এর ফলে মানুষের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে। বিপদের সম্মুখীন হবে সমগ্র মানবসমাজ।” গবেষক রাহুল কাশ্যপ বলেন, “ভবিষ্যতে জীববৈচিত্রের উপর এর প্রভূত প্রভাব পড়তে পারে।”

আইআইটি খড়্গপুরের দুই গবেষক তথা বিজ্ঞানীর মতে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে, সবুজায়নের অভিযান অব্যাহত রাখার সাথে সাথে গভীর বনাঞ্চলগুলির প্রতিও সরকারকে নজর দিতে হবে। তাঁরা বলেন- কোনভাবেই গভীর বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলি ধ্বংস করা যাবেনা। স্থায়ী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বন-ব্যবস্থাপনার সূচনা করতে হবে। পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ আরো কমাতে হবে। সর্বোপরি বিশ্ব উষ্ণায়নে লাগাম টানতে হবে। উল্লেখ্য, অতি সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহাবিদ্যালয়ের একটি গবেষণাতেও উঠে এসেছিল, গত তিন দশকে জঙ্গলমহলে (মূলত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায়) ৭৫ হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

thebengalpost.net
ঘন জঙ্গলে ব্যাহত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া: