দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর: অতিমারীর হানায় ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সান্নিধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে ঠিকই, আন্তরিক সম্পর্কে ব্যবধান তৈরি হয়নি! হতে পারে না। গুরু-শিক্ষকের এই সম্পর্ক যে অনাদি অনন্ত কাল হতে শ্রদ্ধার, ভালোবাসার, শিক্ষালাভ আর সমর্পণের। একে অপরের সান্নিধ্য পরস্পরকে পূর্ণতা দান করে; কিন্তু বিচ্ছেদে তৈরি হয়না মলিনতা! পরমপূজ্য শিক্ষক ও দার্শনিক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের (ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি) ১৩৪ তম জন্মদিবস সেকথাই আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল। “শিক্ষারত্ন” সম্মানে ভূষিত শিক্ষক’রা তাঁদের পুরস্কার বা সম্মান উৎসর্গ করলেন ছাত্রদেরই! প্রসঙ্গত, অতিমারী আবহে এবারের ‘শিক্ষক দিবস’ও আড়ম্বর-হীন, প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ রহিত। তাই, গত বছরের মতোই রাজ্য সরকারের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান তথা “শিক্ষারত্ন” সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠানও পালিত হল মূলত ভার্চুয়ালি। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর), জাতীয় শিক্ষক তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১৩৪ তম জন্মদিবসে এই রাজ্যের মোট ৬১ জন শিক্ষকের হাতে “শিক্ষারত্ন” সম্মান তুলে দেওয়া হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২৩ জন, মাদ্রাসা থেকে ২ জন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৫ জন এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২১ জন এবার এই সম্মান পেলেন। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর ছিল রাজ্যের শিক্ষক মহল। মহানগর কলকাতা থেকে শিক্ষকদের সম্মান জ্ঞাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রীরা। প্রতিটি জেলায় জেলাশাসক তথা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে এবার “শিক্ষারত্ন” সম্মান পেয়েছেন ৩ জন শিক্ষক। ঝাড়গ্রাম থেকেও ৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা। স্বভাবতই খুশির হাওয়া জঙ্গলমহল জুড়ে!

thebengalpost.in
পশ্চিম মেদিনীপুরের “শিক্ষারত্ন” দের সাথে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল :

রাজ্যের মোট ৬১ জন শিক্ষককে এদিন সম্মান জানানো হয় এবং তাঁদের যথাযোগ্য সম্মান-অর্থ, শংসাপত্র ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের যে তিন জন শিক্ষক “শিক্ষারত্ন” সম্মাননা পেলেন, তাঁরা হলেন যথাক্রমে- বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. অজয় কুমার মিশ্র, মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী এবং দাঁতনের দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান। অপরদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে “শিক্ষারত্ন” পুরস্কারে বিভূষিত হয়েছেন, যথাক্রমে- ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অধ্যক্ষ ড. দেবনারায়ণ রায়, ঝাড়গ্রাম নেতাজি আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্পনেশ মিশ্র এবং রানী বিনোদ মঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ড. পুষ্পলতা বারুই মুখার্জি। ভার্চুয়ালি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করার পর দুই জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন যথাক্রমে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল এবং ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত। তাঁদের সম্মান জানানোর জন্য বই, শাল এবং অন্যান্য পুরস্কার সামগ্রীর সঙ্গে তুলে দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকার চেক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল বলেন, “রাজ্যের তরফে ৩ জন শিক্ষকের হাতে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার তুলে দেওয়ার সাথে সাথেই, জেলার ৩১ জন গবেষক শিক্ষক (Phd Research Scholars) এর হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে।”

thebengalpost.in
ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী :

প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর টাউন হেরিটেজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর “রাষ্ট্রপতি পুরস্কার” এও ভূষিত হয়েছেন। এবার রাজ্য সরকারের তরফে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার। ড. চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই সম্মান শুধু আমার নয়, আমার বিদ্যালয়েরও। আর, আমার এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করছি আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের! আমার বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী-কে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এই সম্মান। সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর-কে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি সন্মানীয়া জেলাশাসক ড. রশ্নি কমলের প্রতি।” অপরদিকে, ঝাড়গ্রাম রানী বিনোদ মঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ড. পুষ্পলতা বারুই মুখার্জি বললেন, “সম্মান মানে স্বীকৃতি। নিঃসন্দেহে আরও এগিয়ে চলার পথে এক আলোকবর্তিকা স্বরূপ। আমাদের বিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকেই।।”

thebengalpost.in
ড. পুষ্পলতা বারুই মুখার্জি :