দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ মে: গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ২৪ জন টপারের (প্রত্যেকেরই পার্সেন্টাইল ১০০) তালিকায় রাজ্য থেকে জায়গা করে নিয়েছে দুই কৃতী, যথাক্রমে- দেবদত্তা মাঝি ও অর্চিষ্মান নন্দী। অর্চিষ্মান আইআইটি খড়্গপুর ক্যাম্পাসে অবস্থিত ডিএভি মডেল স্কুলের ছাত্র। তার বাড়ি খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারবেটিয়া এলাকায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) প্রকাশিত CBSE-র দ্বাদশ শ্রেণীর ফলাফলেও সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অর্চিষ্মান। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০ (৯৮ শতাংশ)। সরকারিভাবে এবার CBSE-র তরফে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে PTI সূত্রে জানা গেছে, CBSE-র দ্বাদশের সম্ভাব্য টপার বা প্রথম স্থানাধিকারী সাভি জৈন (উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা)-এর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৯ (৫০০-র মধ্যে)। সেই হিসেবে সর্বভারতীয় মেধাতালিকার প্রথম দশে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের বাসিন্দা অর্চিষ্মানের জায়গা যে নিশ্চিত, তা বলাই যায়। স্কুল তথা জেলাতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে অর্চিষ্মানই।

অর্চিষ্মানের বাবা মিঠুন নন্দী একটি ওষুধ প্রস্তকারক সংস্থার পদস্থ কর্মী। মা অনিন্দিতা মাইতি (নন্দী) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। অর্চিষ্মানের মামাতো দাদু বঙ্কিমবিহারী মাইতি ছিলেন খাকুড়দা সংলগ্ন বড়মোহনপুর হাইস্কুলের রসায়নের শিক্ষক। রসায়নের কঠিন ‘মারপ্যাঁচ’ ছাত্রদের তিনি শেখাতেন মজার ছলে। আইআইটি খড়্গপুরের ১৯৭০ সালের প্রাক্তনী এই দুঁদে রসায়নবিদ-ই নাতি অর্চিষ্মানের ‘শিক্ষাগুরু’। তাঁর হাত ধরে বাংলা মিডিয়ামেই অর্চিষ্মানের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয়। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত অর্চিষ্মান পড়ে খাকুড়দা সংলগ্ন সাউরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয় সেন্ট অ্যাগনেস, খড়গপুরে। ICSE (দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা)-তে ৯৯ শতাংশ নম্বর সহ সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে অর্চিষ্মান। এরপর একাদশ শ্রেণীতে সে ভর্তি হয় CBSE বোর্ড অনুমোদিত আইআইটি খড়্গপুরের ডিএভি মডেল স্কুলে। সর্বভারতীয় জয়েন্টে সাফল্য অর্জনের পর দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষাতেও মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে স্কুলের টপার অর্চিষ্মান।
ইংরেজি, অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা এবং কম্পিউটার সায়েন্সে অর্চিষ্মান পেয়েছে যথাক্রমে- ৯৭, ৯৮, ৯৭, ৯৮। তবে, কেমিস্ট্রি বা রসায়নে ১০০-য় ১০০ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। অর্চিষ্মান কিংবা তার বাবা-মা অবশ্য এজন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন দাদু বঙ্কিমবিহারী মাইতিকেই। অর্চিষ্মান বলে, “কেমিস্ট্রির জটিল সব সিরিজ কিভাবে সহজে মনে রাখতে হয়, তা দাদুই শিখিয়েছেন। এই যেমন, ইলেকট্রো পজিটিভ সিরিজের জন্য দাদুর শেখানো ছড়া- পটাশ (পটাসিয়াম) বেরিয়ে (বেরিলিয়াম) কাশো (ক্যালসিয়াম-সোডিয়াম)/ মাগো (ম্যাগনেসিয়াম) আলু (অ্যালুমিনিয়াম)/ মন (ম্যাঙ্গানিজ) জানে (জিঙ্ক) তো কর্ম (ক্রোমিয়াম) ফেরে (আয়রন) লেটে (লেড)/ হাই (হাইড্রোজেন) তুলে আয়/ কু (কপার) মাসি (মারকারি-সিলভার) গো (গোল্ড) পিটি (প্ল্যাটিনাম)।” অশীতিপর দাদু বর্তমানে গ্লুকোমায় আক্রান্ত। বুকে বসেছে পেসমেকার। তাই তাঁর ‘রসকাব্যে রসায়ন’ নামে বইটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে বলে অর্চিষ্মানের আক্ষেপ। অর্চিষ্মান জানিয়েছে তার পরবর্তী লক্ষ্য, আগামী ১৮ মে অনুষ্ঠিত হতে চলা জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্স পরীক্ষায় সফল হয়ে আইআইটি খড়্গপুরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হওয়া। অর্চিষ্মান জানায়, “আমার দাদু ১৯৭০ সালে আইআইটি খড়্গপুর থেকে রসায়ন নিয়ে এমএসসি পাস করেন। তিনি ছড়ার মাধ্যমে আমার রসায়ন তথা বিজ্ঞান শিক্ষার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। আমারও স্বপ্ন দাদুর মতোই আইআইটি খড়্গপুরে পড়া।”