দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: দিনেদুপুরে শোনা যেত গুলির আওয়াজ। রাস্তায় পড়ে থাকত লাশ! ২০০৯-‘১০ সালের সেই ভয়াবহ দিনগুলির কথা স্মরণ করলে আজও শিউরে ওঠেন পিড়াকাটার বাসিন্দারা। ২০০৯ সালের সেই ভয়াবহ সময়েই পিড়াকাটা সংলগ্ন জঙ্গলঘেরা একটি গ্রামে জন্ম লাবনী’র। মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে প্রত্যন্ত বহড়াবনী গ্রামের সেই লাবনী মাহাত-ই মুখ উজ্জ্বল করেছে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ গ্রামবাসীদের। পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লাবনী এবার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪৭ নম্বর (প্রায় ৯২.৫ শতাংশ)। অঙ্কে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩ নম্বর পাওয়া লাবনী ডাক্তার হতে চায়। যদিও, তার স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে অভাব! এমনটাই আশঙ্কা করছেন লাবনীর বাবা, পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনু মাহাত। আর এই খবর শোনামাত্রই লাবনীর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছেন, “আমরা লাবনীর জন্য গর্বিত। আগামীদিনে ও আরও এগিয়ে যাক। আমরা সর্বতোভাবে ওর পাশে থাকব।”
শুধু লাবনীই নয় একসময়ের মাও ‘আঁতুড়ঘর’ শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন ‘কন্যাশ্রী’-ই এবার নজরকাড়া ফল করেছে। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে বিদিশা লাহা, ৬৭৩। তারপর যথাক্রমে- লাবনী মাহাত (৬৪৭), শ্রেয়সী পাল (৬৪২), মল্লিকা মাহাত (৬৪২), রিম্পা মাহাত (৫৯৬)-রা। ক্লাসে বরবারই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করত লাবনী। মাধ্যমিকেও সেই সাফল্য বজায় রেখেছে লাবনী। পিড়াকাটা হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি পিন্টু ওঝা বলেন, এই সাফল্য অর্জনে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছে লাবনী। সরকারের দেওয়া ‘সবুজসাথী’ সাইকেলে করে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পিড়াকাটা হাইস্কুলে যাওয়া, কোচিং সেন্টারে বিজ্ঞানের বিষয়গুলি ঝালিয়ে নেওয়া, তারপর বাড়ি ফিরে নিজের মতো করে পড়া- সবকিছুই মন দিয়ে করেছে লাবনী। বহড়াবনী গ্রামের বাসিন্দা তথা পিড়াকাটা পুলিশ ফাঁড়ির সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনু’র দুই মেয়ের মধ্যে লাবনীই বড়। ছোট মেয়ে শ্রাবনী পিড়াকাটা হাইস্কুলেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। কিনুর স্ত্রী রীনা গৃহবধূ। একচিলতে মাটির বাড়িতে কোনোমতে দিন কাটে চারজনের। সিভিক ভলেন্টিয়ারের সামান্য বেতনে চারজনের সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে মেয়ের জন্য আলাদা করে গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থাও করতে পারেননি কিনু! কাজেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য ছাড়া, কোচিং সেন্টারের ব্যাচই ছিল লাবনীর ভরসা।
পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জয়তী দাস, সুপর্ণা সাহা, শিক্ষক গৌতম মণ্ডল, সঞ্জয় দাস প্রমুখ বলেন, শান্ত ও নম্র স্বভাবের লাবনী প্রথম থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী। ক্লাসে সবদিনই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। পড়াশোনা ছাড়াও আবৃত্তিতেও খুব ভালো লাবনী। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বও পালন করেছে সে। লাবনীর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। পিড়াকাটা হাইস্কুলেই বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে নিটের জন্য প্রস্তুতি নিতে চায় সে। পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতনু মণ্ডল বলেন, “একসময়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকার ছেলেমেয়েরাই আজ আমাদের গর্ব। ওদের আরও সাফল্য কামনা করি।” মেধাবী লাবনীর স্বপ্নপূরণের পথে অভাব বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? এমনটাই আশঙ্কা করছিলেন তার বাবা কিনু মাহাত। স্বয়ং পুলিশ সুপারের আশ্বাস পাওয়ার পর কিনু বলেন, “আমি গর্বিত! স্যারকে অনেক ধন্যবাদ ও প্রণাম জানাই।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: "দাদু বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন...!" চোখে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: বাবা সবজি বিক্রেতা। মা গৃহবধূ। দারিদ্র্যের সাথে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৮ মে: রাজস্থানের জয়সলমীরে ভারতের হাতে বন্দি হলো এক পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: খুব সামান্য কয়েকটা বিষয়ে 'অমিল' থাকলেও, দুই…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: মাধ্যমিকের পর এবার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকাতেও জায়গা…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৭ মে: পাকিস্তানকে জবাব দেওয়া শুরু করল ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান ও…