thebengalpost.net
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সুমন :

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ মে:’শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই’। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে রবি ঠাকুরের উপেন (‘দুই বিঘা জমি’র)-কে ‘বঞ্চিত’ হতে হয়েছিল তা থেকেও! বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকলেও, শালবনীর মানিকের ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণটা অবশ্যই তাঁর ‘সুসন্তান’ সুমন। শুধু তাঁর নয়, ইতিমধ্যে স্কুল এবং সমগ্র ব্লকের নাম উজ্জ্বল করেছে সুমন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সুমন প্রধান এবার মাধ্যমিকে ৬৫৩ (৭০০’র মধ্যে) নম্বর পেয়েছে। বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার সাথে সাথেই, ব্লকের সম্ভাব্য দ্বিতীয় (সম্ভাব্য প্রথম- পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের সোহম ঘোষ, ৬৬৭) স্থানাধিকারী হিসেবেও সুমনের নামই শোনা যাচ্ছে।

thebengalpost.net
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সুমন :

সুমনের বাবা মানিক প্রধান। শালবনী ব্লকের পাথরকুমকুমি (মৌপাল সংলগ্ন) এলাকার বাসিন্দা। পেশায় সামান্য একজন কৃষক। নিজের দুই বিঘা মতো জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। অবসর সময়ে নানা ধরনের কাজও করেন। অভাবের তাড়নায় বড় ছেলে সৌভিক সদ্য একটি ছোটোখাটো সংস্থায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজে যোগ দিয়েছে। পরিবারের ‘গর্ব’ ছোটো ছেলে সুমন। বিদ্যালয়ে বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করে এসেছে সে। বিভিন্ন স্কলারশিপ পাওয়া ছাড়াও, বিদ্যাসাগর সায়েন্স অলিম্পিয়াড (২০২১) এও পুরস্কৃত হয়েছে সুমন। আর, এবার মাধ্যমিকেও ৯৩ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রথম এবং ব্লকের সম্ভাব্য দ্বিতীয় হয়েছে সে। সেটাও আবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য নিয়েই! সুমন জানায়, “বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য ছাড়া আমি কখনোই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতাম না! ওনারা সবরকম ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্কুলের পড়াশোনার বাইরেও যখনই কোনো সমস্যা হয়েছে, আমি ছুটে এসেছি। আমাকে স্কুল ছুটির পর সময় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছেন। বই পত্র দিয়েও সাহায্য করেছেন। লকডাউনের সময় যখন অনলাইনে পড়াশোনা চলছিল, সেই সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার ফোনের রিচার্জও করে দিয়েছেন!”

দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান সুমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু, বাবা সামান্য কৃষক, মা গৃহবধূ (রেখা প্রধান)। কিভাবে স্বপ্ন সফল হবে সুমনের? বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া জানান, “সত্যিই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে সুমন বড় হয়েছে। আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করেছি এবং আগামী দিনেও করব। আমরা ভেবেছিলাম ও ৬৬৫-৬৭০ পাবে। ইংরেজিতে একটু কম (৮১) হয়ে গেছে! বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পর, ওর ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। চাইব ওর স্বপ্ন সফল হোক। আমাদের বিদ্যালয়ের আরেকজন ছাত্র (শ্যামসুন্দর ঘোষ) ৬৫০ নম্বর পেয়েছে। ওর প্রতিও আমাদের শুভেচ্ছা রইল।” সুমন অঙ্কে ৯৯, পদার্থ বিজ্ঞান বা ভৌত বিজ্ঞানে ৯৪, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭ পেয়েছে। সবমিলিয়ে ৯৩ শতাংশ নম্বর সহ ৬৫৩ পেয়ে জঙ্গলমহল শালবনী ব্লকে সম্ভাব্য দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে সুমন। শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের কাছেই সুমনের পরিবারের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে, তাঁদের পাশে থাকার জন্য! (বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ফোন নম্বর- 9800065294)

thebengalpost.net
বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষকের সঙ্গে: