মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ ডিসেম্বর: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) গর্ব ও ঐতিহ্যের ‘বিদ্যাসাগর স্মারক বক্তৃতা’। একাদশতম স্মারক বক্তৃতা প্রদান করলেন জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক তথা হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেনি ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর’ অধ্যাপক অরবিন্দ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল, “গণ-তন্ত্রের সংকট, সমানুভূতি এবং উত্তম পুরুষ বহুবচনের ‘সমূহ বিপদ'”। ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তী বোঝালেন, “অনেক ‘আমি’ (I) নিয়ে কিন্তু ‘আমরা’ (We) হয়না, আমার মতো কিংবা আমার মতো নয়, এমন অনেককে নিয়েই ‘আমরা’ হয়।” সেই সকল ‘মত’কে (বৈপরীত্য-কে) গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার নাম-ই গণতন্ত্র। তাঁর মতে, ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান….বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’- অতুলপ্রসাদের এই গানের মধ্যেই গণতন্ত্রের সার্থকতা বা বৈচিত্র্য লুকিয়ে রয়েছে। আর, ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ বোঝাতে একদিকে যেমন তিনি ভারতীয় দর্শনের একের পর এক ‘লজিক’ ব্যবহার করেছেন, ঠিক তেমনই সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও চিত্রকলার উদাহরণও তুলে ধরেছেন।
‘জন’ ও ‘গণ’র সম্পর্ক নিয়ে তিনি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেন। জন গণ মন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে, ভারতীয় সংবিধানের ‘বহুত্ববাদ’কে তিনি যেমন অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন, ঠিক তেমনই রাজনীতিতে শাসকের ‘চাপিয়ে দেওয়ার’ (যেকোনো সিদ্ধান্ত) মনোভাব কিংবা জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা (একদলের ভোটে জিতে অন্য দলে চলে যাওয়া প্রভৃতি)’র বিষয়টিকেও কটাক্ষ করেছেন। তাঁর মতে, “অপরের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করতে পারলে কিংবা আমির মধ্যে বহুত্বকে উপলব্ধি করতে পারলে সার্থক গণতন্ত্র উপহার দেওয়া সম্ভব!” এ প্রসঙ্গে তিনি, প্রতিটি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একাধিক ‘আমি’ কিংবা একাধিক ‘মত’ (বা, ‘মতবিরোধ’) এর উদাহরণও টানেন! রসিকতা করে বিয়েবাড়িতে যাওয়ার আগে ‘মেয়েদের’ পোশাক পছন্দ করার বিষয়টিও উত্থাপন করেন ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের এই প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তবে, বর্তমান সময়ে ভারত সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে ‘গণতন্ত্র’ এর নামে ‘অভিজাততন্ত্র’ এর প্রবণতা নিয়েও সতর্ক করেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি দার্শনিক। তাঁর ‘গণতন্ত্র’ ব্যাখ্যায় মন্ত্র-মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথিবৃন্দ। উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে যখন গণতন্ত্রের সংকট অনুভূত হচ্ছে সর্বত্র, ঠিক তখনই বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তী’র মনোগ্রাহী বক্তব্য এক সার্থক গণতন্ত্র এবং সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখায়।”
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ সভাগৃহে অনুষ্ঠিত এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক চক্রবর্তী ছাড়াও, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক অনিল আচার্য। ছিলেন, বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ (ডিন) অধ্যাপক সত্যজিৎ সাহা, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের অধ্যক্ষ (ডিন) অধ্যাপক তপন কুমার দে, নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী প্রমুখ। সর্বোপরি, সভার সভামুখ্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসু। স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক চক্রবর্তী ভারত সহ বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্রের ‘সংকট’ এর কথা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, “গণতন্ত্র মানে জনগণের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া নয়! জন-গণের ভিন্ন ভিন্ন মতকে গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া।” তাঁর মতে, “গণতন্ত্রে বহুত্বকে রক্ষা করতেই হবে, নইলে সমূহ বিপদ!” তবে, তিনি ‘আশা’ ছাড়তেও রাজি নন! তিনি বলেন, “যতক্ষণ অন্যের যন্ত্রণা, কষ্টে আমাদের মন কাঁদবে, ততক্ষণ অবধি ‘আশা’ আছে! এমনটা রবীন্দ্রনাথও মনে করতেন।” বক্তৃতা শেষে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অধ্যাপক চক্রবর্তী তাঁর এদিনের ‘বক্তৃতা’র ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘প্রাসঙ্গিকতা’ টেনে বলেন, “বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনাচরণে ছিলেন একজন খাঁটি ভারতীয়। ভারতীয় দর্শন ও ব্যাকরণে পণ্ডিত হয়েও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ‘পাশ্চাত্য শিক্ষায়’ শিক্ষিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের অসহায় অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাঁকে উৎসাহিতও করেছেন। নারী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার, শেষ জীবনে কারমাটারে (বিহারের), আদিবাসী সন্তানদের সঙ্গে থেকে ভারতীয় সভ্যতার বৈচিত্র্য উপলব্ধি করেছেন। এই বৈচিত্র্য বা বহুত্বকেই আমি নানা ‘লজিক’ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।” এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ভারতমাতার ‘সুযোগ্য সন্তান’ তথা ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির এক আদর্শ ‘ধারক ও বাহক’ হিসেবে অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তী একদিকে যেমন ‘ব্রহ্মচর্য’ পালন করেছেন, ঠিক তেমনই আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়েও সাফল্যের সাথে অধ্যাপনা করে চলছেন। গণতন্ত্রের সার্থক রূপরেখা অঙ্কন করতে গিয়ে অধ্যাপক চক্রবর্তী তাই বারে বারে উচ্চারণ করেছেন, ‘বিবিধের মাঝে মিলন-মহান’ শব্দবন্ধ। আর, রবি ঠাকুরকে স্মরণ করে গেয়ে উঠেছেন, “সকল দ্বন্দ্ব-বিরোধ-মাঝে জাগ্রত যে ভালো/ সেই তো তোমার ভালো।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার 'খাসতালুক' সবংয়ে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ওড়িশার বেসরকারি কলেজে বাংলার ছাত্রের রহস্যমৃত্যু! খুনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো মেদিনীপুর শহর…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ নভেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এনুমারেশন…