দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ অক্টোবর: দেবী দুর্গা-কে চোখের জলে বিদায় জানানোর দিন ‘দশমী’। দিনটিকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ বিজয়-দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই তিথিতেই দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে রামচন্দ্র ‘বধ’ করেন অধর্ম আর অশুভ শক্তির প্রতীক রাবণকে। রাবণ বধের মাধ্যমে অধর্মের নাশ করে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেন রামচন্দ্র। হিন্দুধর্মে রামকে আত্মচেতনার প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে রাবণ দৃঢ়চেতা, বীর, শিবভক্ত হলেও তিনি সীতাহরণকারী। তাই তাঁকে নেতিবাচক শক্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য যে, রাবণের দশটি মাথা-কে মানুষের দশটি অশুভ বা নেতিবাচক গুণের সঙ্গে তুলনা করা হয়, যেমন- রাগ, লোভ, হিংসা, অহংবোধ, অসহিষ্ণুতা, অসংবেদনশীলতা, ভয়, ঘৃণা, অনুশোচনা, লালসা। মর্তবাসীর মন থেকে এই অশুভ বা নেতিবাচক গুণের বিনাশ-সাধনের প্রতীকই হল ‘রাবণ দহন’ বা ‘রাবণ বধ’ বা ‘দশেরা’ অনুষ্ঠান। সারা দেশে রাবণ দহন বা দশেরা পালন হয় নানা রীতিতে। ‘মিনি ইন্ডিয়া’ রূপে খ্যাত ‘রেল শহর’ খড়্গপুরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহা ধুমধামে পালিত হলো ৯৯তম রাবণ দহন বা দশেরা অনুষ্ঠান। জঙ্গলমহল শালবনীর পিড়াকাটাতেও রীতি ও ঐতিহ্য মেনে ৬৩তম রাবণ পোড়া বা রাবণ দহন বা রাবণ বধ সুসম্পন্ন হয়। দুই জায়গাতেই হাজার হাজার মানুষ রাবণ দহন অনুষ্ঠান এবং আতশবাজি প্রদর্শনী উপভোগ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন।

thebengalpost.net
রাবণ বধে পুলিশ সুপার সহ অন্যান্যরা:

তবে, শুধু খড়্গপুর বা পিড়াকাটা নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মহাসড়ম্বরে এই ‘রাবণ দহন’ অনুষ্ঠান পালিত হয় মঙ্গলবার। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য আজ, বুধবারও পালিত হবে এই অনুষ্ঠান। খড়্গপুর শহরে দশেরা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও মহা ধুমধামে ‘রাবণ দহন’ অনুষ্ঠিত হলো নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার রাবন পোড়া মাঠে। উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষ! অনুষ্ঠান ঘিরে ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি। ৯৯তম রাবণ দহন বা রাবণ বধ অনুষ্ঠানে তৈরী করা হয়েছিল ৫৫ ফুটের রাবণ। মঞ্চ থেকে সুইচের মাধ্যমে প্রতীকী ‘তীর’ মেরে রাবন বধ করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত ব্যানার্জী, দশেরা উৎসব কমিটির সভাপতি প্রদীপ সরকার সহ শাসকদলের নেতা-নেত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা। শারীরিক কারণে অবশ্য উপস্থিত থাকতে পারেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা।

thebengalpost.net
পিড়াকাটাতে রাবণ বধ:

অন্যদিকে, জঙ্গলমহল শালবনীর পিড়াকাটা, সাতপাটি প্রভৃতি এলাকাতেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই রাবণ বধ বা রাবণ দহন বা রাবণ পোড়া অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয় দৃষ্টিনন্দন আতশবাজির প্রদর্শনী দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। অধর্মের প্রতীক রূপী রাবণের বিশালাকায় দেহে আগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে রাবণ দহন সুসম্পন্ন হয়। জঙ্গলমহলেও এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল পুলিশের কড়া প্রহরা। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পিড়াকাটা, সাতপাটি সহ বিভিন্ন এলাকায় রাবণ বধ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।

thebengalpost.net
আতশবাজির প্রদর্শনী: