শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি: আধুনিক গণ মাধ্যম তথা সমাজ মাধ্যমের দৌলতে অন্যান্য নানা উৎসবের সঙ্গে ফুড ফেস্টিভ্যাল বা ‘খাদ্য উৎসব’-ও বাংলায় আজ বেশ জনপ্রিয়। সেই ফুড ফেস্টিভ্যালেরই অঙ্গ হিসেবে কোথাও আয়োজিত হচ্ছে ‘ইলিশ চিংড়ি উৎসব’ তো কোথাও আবার ‘পিঠে পুলি উৎসব’। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা সংগ্রামের পীঠস্থান মেদিনীপুর (Medinipur) আবার সবকিছুতেই স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষর রাখতে অভ্যস্ত! রীতি ও ঐতিহ্য মেনে গত কয়েক বছর ধরে এখানে উদযাপিত হচ্ছে অভিনব ‘পেটাই পরোটা উৎসব’। পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার সবংয়ের ৬ নং চাউলকুঁড়ি অঞ্চলের নেধুয়াতে শতবর্ষ প্রাচীন ‘উত্তরপল্লী হরিমন্দির উৎসব’-কে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে আয়োজিত হয়ে আসছে জনপ্রিয় এই পেটাই পরোটা উৎসব। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি), ভীম একাদশীর দিনও সাড়ম্বরে তা আয়োজিত হলো!

thebengalpost.net
লাইন দিয়ে পেটাই পরোটা খাওয়া:

কথিত, নেধুয়া গ্রামের এই হরি মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হারু বৈরাগী। এই মন্দির প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশি পুরানো। মহামারীর হাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করতে ও গ্রামে গ্রামে হরিনাম সংকীর্তন প্রচার করতে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন হারু বৈরাগী। পেশায় শিক্ষক, গ্রামের সংস্কৃতি সচেতন মানুষ হিসেবে পরিচিত কানাই চাঁদ পাল জানান, প্রায় ২০০ – ২৫০ বছর আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা হারু বৈরাগী তীর্থে চলে যান। প্রায় এক বছর পর হঠাৎ তীর্থ থেকে ফিরে এসে নিজের হাতে মাটি দিয়ে ইঁট তৈরি করে, সেই ইঁটকে পুড়িয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকেই প্রতি বছর ভীম একাদশীতে এই হরি মন্দিরে পুজো হয়ে আসছে।

এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত বাসিন্দারা বলেন, যেহেতু এই পুজো একাদশীতে হয়, তাই এলাকার মানুষ অন্নভোগ বা ওই জাতীয় প্রসাদ খাননা; সেজন্যই বছর সাতেক আগে বাসিন্দাদের উদ্যোগে এই পেটাই পরোটা উৎসবের প্রচলন করা হয়। এই মন্দির প্রাঙ্গণে দুই মেদিনীপুরের সবং, পটাশপুর, ভগবানপুর, নারায়ণগড়, পিংলা, ময়না সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসেন এবং পরোটা উৎসবে মেতে ওঠেন। উদ্যোক্তারা জানান, এই পেটাই পরোটা উৎসবে প্রায় ৮ থেকে ১০ কুইন্টাল ময়দার পরোটা তৈরি করা হয়। কয়েকশ পুরুষ-মহিলা সেই কাজে হাত লাগান। অন্তত ৫-৬ হাজার মানুষ লাইন দিয়ে তা খান। পেটাই পরোটার সঙ্গে দেওয়া হয় ছোলার ডাল, তরকারি প্রভৃতি। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারও প্রায় ৬ হাজার মানুষ এই উৎসবে সামিল হয়ে, লাইন দিয়ে বসে পেটাই পরোটা খেলেন। গ্রামবাসীরাই নিজেদের উদ্যোগে গত ৭ বছর ধরে মহানন্দে এই উৎসব পালন করে চলেছেন। বলাই বাহুল্য, ধীরে ধীরে অন্যান্য উৎসবের মতো পশ্চিম মেদনীপুরের এই ‘পেটাই পরোটা উৎসব’-ও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে চলেছে!

thebengalpost.net
পেটাই পরোটা উৎসব:

thebengalpost.net
তৈরি হচ্ছে পেটাই পরোটা: