দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর: একদিন অসুস্থ স্বামী-কে সুস্থ করতে ছুটেছিলেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। স্বামীর মৃত্যুর পর বেছে নিয়েছেন তাঁর (স্বামীর) পেশাকেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে মোহনপুর (খড়্গপুর গ্রামীণের) এলাকার মৃৎশিল্পী মনিকা পাল। আর জি কর কাণ্ডে তাঁর বার্তা, “মা আসছেন, চাইব তার আগেই তাঁর মেয়ে (তিলোত্তমা) বিচার পাক। একইসঙ্গে, চিকিৎসার অভাবে যেন কারুর মৃত্যু না হয়; সেটাও চাইব।” এক সময় অসুস্থ স্বামীকে সুস্থ করার জন্য প্রতিমা গড়তে শুরু করেছিলেন। ধরেছিলেন সংসারের হাল। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর পেশাকেই নিজের ‘পেশা’ করে নিয়েছেন। মেদিনীপুর-খড়্গপুরের বুকে এখন একজন সুপরিচিত মৃৎশিল্পীর নাম- মনিকা পাল!
মনিকা জানান, এখন সারা বছর ধরেই কাজ। তবে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের আগে চাপটা একটু বেশিই থাকে। ব্যস্ততার মধ্যেই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন প্রতিবাদ মিছিলে। নারকীয় এই ঘটনা বিচলিত করেছে তাঁকেও। পাশাপাশি কাজেও মন দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “তিলোত্তমা বিচার পাক। একইসঙ্গে, হাসপাতালেও পরিষেবা পাক দরিদ্র, মুমূর্ষু মানুষজন।” তাঁর মতো সাধারণ মানুষজনদের একমাত্র ভরসা যে সরকারি হাসপাতাল; তাও মনে করিয়ে দেন মনিকা। গ্রাম এবং শহরের হাজার হাজার মানুষ ফি দিন হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন। তাই, প্রতিবাদ-আন্দোলনের সঙ্গেই চিকিৎসাও চলুক। তবেই দরিদ্র-অসহায় মানুষও প্রতিবাদের শক্তা আর সাহস পাবেন। যদিও, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা ‘অভয়ার ক্লিনিক’ চালাচ্ছেন শুনে খুশি হন মনিকা!
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে স্বামী প্রফুল্ল পাল ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর বাধ্য হয়েই প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন মনিকা। তারপর, গত ২৫-৩০ বছর ধরে প্রতিমা গড়াই তাঁর জীবনের মূল পেশা হয়ে উঠেছে। পুজো আসতে আর মাত্র ২৫-২৬ দিন। এই সময় দম ফেলার ফুরসৎ নেই! বাড়ি লাগোয়া কারখানা। টানা ১৩ ঘন্টা সেখানেই কেটে যায়। মাঝেমধ্যে চোখ রাখেন টিভির পর্দায় বা মোবাইলে। ‘তিলোত্তমা’ নিয়ে নতুন কোনো খবর বা আপডেট থাকলে, একটু দেখে নেন। মনিকা জানান, “দুর্গাপুজো-কে ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ের একটা সংস্থান হয়। প্রতিমা গড়ার বাঁশের কাঠামো থেকে খড়, মাটি, শোলা, ডাকের সাজ, রঙ, শাড়ি, গয়না। গাড়ি চালক থেকে মন্ডপ কারিগর, বিভিন্ন ব্যাবসা চাঙ্গা হয়।” মনিকারও একদিন ছিল কুঁড়ে ঘর। প্রতিমা গড়েই আজ পাকা বাড়ি করেছেন। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থান হচ্ছে তাঁর কারখানায় বা মৃৎশিল্পালয়ে কাজ করে। বাড়ির পাশেই প্রতিমা গড়ার ঘর। যা এতদিন টিনের ছাউনি ছিল। এক বছর আগেই পাকা ছাদ হয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে। ধাপে ধাপে সেই ঋণ পরিশোধ হয়ে আসছে। চলতি বছরে ২৩টি দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেয়েছেন। এসব প্রতিমা পৌঁছে যাবে মেদিনীপুর, খড়্গপুরের বিভিন্ন মন্ডপে। বরাত পেয়েছিলেন গণেশেরও। শেষ মুহূর্তে চরম ব্যস্ততা বিশ্বকর্মা-কে ঘিরেও। তবে, খামখেয়ালি বৃষ্টির জন্য প্রতিমার মাটি শুকোতে একটু সমস্যা হচ্ছে বলে জানান মোহনপুরের এই মহিলা মৃৎশিল্পী। যদিও, রোদ-বৃষ্টির খেলা যে চলতেই থাকবে, তাও মানেন তিনি। মনিকা বলেন, “এরই নাম তো জীবন। সব ‘বাধা’ জয় করে এগিয়ে যেতে হবে!”