Flood

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতাতে। একবাক্যে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে জনপ্রতিনিধিরা। দু’দিনের টানা বৃষ্টি এবং বিভিন্ন বাঁধ (ড্যাম) থেকে জল ছাড়ার ফলে ভয়াল আকার ধারণ করে শিলাবতী নদী। শিলাবতীর জলেই প্লাবিত হয়েছে গড়বেতা ১নং ব্লকের ১১টি অঞ্চল এবং ২নং ব্লকের ৩টি অঞ্চল। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই জল বাড়তে বাড়তে দুপুর নাগাদ জলের তলায় চলে যায় গড়বেতা-১নং ব্লকের অন্তত ৫০টি গ্রাম। প্লাবিত হয় গড়বেতা-২নং ব্লকেরও ১০-১২টি গ্রাম। বন্যাদুর্গত হন কয়েক হাজার মানুষ। শতাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েকশো বাড়ি, দোকানপাট, বাজার। একাধিক সেতু এবং রাস্তা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। একের পর এক রাজ্য ও গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে বইছে এক কোমর জল। প্লাবিত বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি। দুপুরের পরই ওই সমস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজে নামে এসডিআরএফ (SDRF) এবং পরে এনডিআরএফ (NDRF)- এর একটি দল। সিভিল ডিফেন্স এবং জেলা প্রশাসনের কিউআরটি টিম অবশ্য সকাল থেকেই গড়বেতার প্লাবিত বা দুর্গত এলাকাগুলিতে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। দু’টি ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরা ছাড়াও সকাল ১১টা নাগাদ পৌঁছ।ন মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায় এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরামণ। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরাও। দফায় দফায় বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরিও। সন্ধ্যা নাগাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছেন, “হঠাৎ আসা এই দুর্যোগে পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে। তবে, দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। NDRF, SDRF, QRT উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করেছে। ত্রাণ শিবিরে পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধপত্র এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকেলের পর থেকে গড়বেতার বেশ কিছু জায়গায় জল নামতেও শুরু করেছে। আশা করছি শুক্রবার পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।”

ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এদিকে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, গত দু’দিনে মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০০মিমি। বাঁকুড়া সংলগ্ন গড়বেতার ৩টি ব্লকে অবশ্য বৃষ্টির পরিমাণ ১৫০মিমি বা তার থেকেও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছাড়া, নদীর গতিপথ রুদ্ধ হওয়া, দীর্ঘদিন নদী ও খালের ড্রেজিং বা সংস্কার না হওয়ার কারণেই এই প্লাবন পরিস্থিতি! গড়বেতা-২নং ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন, “গ্রামবাসীরা বলছেন, ১৯৭৮-র সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি। আমরাও দেখিনি। এই প্রথম পলাশিয়া, পাথরবেড়িয়া, জোগারডাঙা, সারবত প্রভৃতি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হলো। তবে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।” গড়বেতা ১নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, “আমিও কখনও এমন বন্যা দেখিনি। প্রায় ৪৫-৫০টি গ্রাম প্লাবিত। বিকেলের পর মাইতা, নেপুরার মতো উঁচু জায়গাগুলি থেকে জল নামতে শুরু করেছে। তবে, বড়মুড়া, সন্ধিপুরের মতো নিচু জায়গাগুলির পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। তবে, প্রশাসনের তৎপরতায় দুর্গত মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।” গড়বেতার জেলা পরিষদের সদস্য তথা শিক্ষকনেতা শান্তনু দে বলেন, “১৯৭৮ সালে আমার চার বছর বয়স। কি দেখেছিলাম মনে নেই। তবে সেই ভয়াবহ বন্যার কথা আজও শুনি। তারপর থেকে গড়বেতা কখনও এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। রেকর্ড বৃষ্টি এবং জল ছাড়ার ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে।” তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন, দু’টি ব্লকের ৩০টির বেশি ত্রাণশিবিরে বন্যাদুর্গত দেড়-দু’হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “গড়বেতা ১নং ব্লকের ২৫টি এবং ২নং ব্লকের ৯টি ত্রাণ শিবিরই পরিদর্শন করেছেন আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সর্বদা সজাগ আছেন আমাদের আশা দিদিরাও। পর্যাপ্ত ওষুধ, ওআরএস, এন্টিভেনাম সহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই মজুত করা হয়েছে।”

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

অন্যদিকে, আশঙ্কা সত্যি করেই চন্দ্রকোনার ঘোষকিরা গ্রামে ভেঙেছে শিলাবতী নদীর বাঁধ। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকেই ঘোষকিরা, শিরসা, ধর্মপোতা, কল্লা, খুড়শি, ধাইখণ্ড গ্রাম প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এইসকল গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চন্দ্রকোনা সহ আশপাশের এলাকার। প্লাবিত কয়েকশ বিঘা কৃষিজমিও। এদিকে, চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ী-শ্রীনগর রাজ্যসড়ক জলমগ্ন বিকেলের পর থেকে। জানা গেছে, ওই এলাকায় কেঠিয়া নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। হাঁটু সমান জল ওই রাজ্য সড়কের চাতালে। ঘাটালের গোবিন্দপুর, রানীচকের নির্মীয়মান স্লুইস গেট নিয়েও চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের কপালে। শুক্রবার চন্দ্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, ঘাটাল নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায় ওই দু’টি স্লুইস গেটে আপদকালীন কাজ করা হচ্ছে। বাকি ৩টি স্লুইস গেটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” শুক্রবার গড়বেতা ও চন্দ্রকোনার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেচ দপ্তরের মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভূঁইয়া।

প্লাবিত গড়বেতা:

আসরে NDRF-SDRF:

News Desk

Recent Posts

Midnapore: একদিকে চন্দ্রযান, অন্যদিকে হরিনাম; শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-ক্রীড়া ও পরিবেশের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের বার্ষিক প্রদর্শনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: আধুনিক যুগের বিজ্ঞান থেকে সনাতন সংস্কৃতি, যোগব্যয়াম-খেলাধুলার…

2 days ago

Kharagpur: নতুন কারখানায় কাজ শুরু করবে রশ্মি মেটালিক্স, বাধা সৃষ্টি হলে পুলিশের পদক্ষেপ; নির্দেশ আদালতের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: নতুন কারখানায় অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারবেন…

2 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের একটি বুথেই ৪৯ জন ‘মৃত’ ভোটার, মৃত্যুর ৭ বছর পরও বাদ পড়েনি নাম! প্রশাসনের ঘাড়েই দায় চাপালেন BLO

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: SIR-এর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এই ইস্যুতে…

2 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের মেয়ের ইংলিশ চ্যানেল জয়! নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন আফরিন

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২৯ জুলাই: মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত্রি ঠিক ৯টা ৩১ মিনিট…

6 days ago

Midnapore: স্কুল-টাইমে ঘুরতে ঘিয়ে বিপত্তি, আমড়াতলা ড্যামে তলিয়ে মৃত্যু মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জুলাই: স্কুল ড্রেস পরেই বেরিয়েছিল বাড়ি থেকে। তবে,…

1 week ago

Midnapore: “আপনাদের বেতনটা কত বেড়েছে…?”, নিজের গড়েই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্ষোভের মুখে মন্ত্রী শ্রীকান্ত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জুলাই: "৩ বছর আগে আলুর দাম ছিল ৩টাকা…

1 week ago