দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, জলপাইগুড়ি ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ ‌সেপ্টেম্বর: গত কয়েকদিনে অজানা জ্বরের প্রকোপে উদ্বেগ বেড়েছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। সেই আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেল জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে এক ৬ বছরের শিশুর মৃত্যু-কে কেন্দ্র করে! মঙ্গলবার সকালে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। বুকে জল জমে অর্থাৎ নিউমোনিয়া-র কারণে মৃত্যু বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার ভোরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই শিশু-কে। সেই সময় প্রবল জ্বর, খিঁচুনি এবং অন্যান্য উপসর্গ ছিল। কিন্তু, শেষ রক্ষা করা যায়নি। মঙ্গলবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। হাসপাতালের সুপার রাহুল ভৌমিকের বক্তব্য, “বাচ্চাটি এসেছিল সোমবার ভোরের দিকে। তার বুকে জল জমে গিয়েছিল। নিউমোনিয়ার উপসর্গ ছিল সেই ছোট্ট শরীরে।” চিকিৎসকদের বক্তব্য, পরিবার শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে অনেকটাই দেরী করে। যার ফলে ওই শিশুর জন্য যে চিকিৎসার দরকার ছিল, তা দেওয়ার মতো সময় পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চিন্তিত রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনও। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে শতাধিক শিশু জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অজানা জ্বর নিয়ে। যদিও, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জনেরও বেশি শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আধিকারিকরা। মৃত্যু’র ঘটনাও একটিই। তবে, দুঃশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে এ নিয়ে। কারণ, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে হু (WHO) থেকে আইসিএমআর (ICMR) সকলেই। যদিও, আপাতত ভাইরাল ফিভার বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ প্রতিটি শিশুর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে! তা সত্ত্বেও, পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

thebengalpost.net
জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল (ফাইল ফটো) :

অপরদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও এই ধরনের অজানা কোন জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। তবে, ভাইরাল ফিভার বা সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা একাধিক বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপক মাসান্ত। এক্ষেত্রে, ভয় না পেয়ে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য হাসপাতালে বা চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে এলে, কিছু সাধারণ ওষুধপত্র দিলেই তা সেরে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে, জলপাইগুড়ি থেকে শুরু করে পশ্চিম মেদিনীপুর, জেলার সকল স্বাস্থ্য আধিকারিকরা একটা বিষয়ে একমত, শিশুদের যেকোন শারীরিক “সমস্যা বা জ্বরজ্বালা যাই হোক না কেন, তা গোপন না করে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এই সময়ে।” এমনটাই মনে করছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও। জেলার ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে CMOH ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত ১২ টি ডেঙ্গু ও ১২ টি ম্যালেরিয়া-র ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রত্যেকেই সুস্থ হয়েছেন। একজনেরও মৃত্যু হয়নি। গত ৭ তারিখ নাগাদ সর্বশেষ ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে।” তিনি এও জানিয়েছেন, “গত বার বা তার আগের বারের তুলনায় ডেঙ্গুর সংখ্যা অনেক কম। এর একটা কারণ, আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ অনেক সতর্ক হয়েছেন। স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিয়মিত মশা মারার স্প্রে করা হচ্ছে। আশা কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।” জেলার করোনা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় ১৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।

thebengalpost.net
পশ্চিম মেদিনীপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানালেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা :