মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ আগস্ট: গত বছরের মতো না হলেও, আগস্ট মাস পড়তেই শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি-বমি-শ্বাসকষ্ট প্রভৃতির প্রকোপ বেড়েছে। গত এক-দু’ সপ্তাহ আগেও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগে জায়গা দেওয়া প্রায় মুশকিল হয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে রোগীর চাপ কিছুটা কমছে বলে রবিবার জানিয়েছেন মেডিক্যালের শিশু বিভাগের প্রধান (HOD) ডাঃ তারাপদ ঘোষ। তবে, কিছুটা কমলেও এখনও গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে জ্বর নিয়ে। শিশু বিভাগের প্রায় ১০০-টি শয্যা (নিকু-পিকু সহ)-ই ভর্তি থাকছে সবসময়। তবে, সব থেকে বেশি দুশ্চিন্তা এখন স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus)-কে নিয়ে। ডাঃ ঘোষ জানালেন, “বেশিরভাগ শিশুরই জ্বর-সর্দি-কাশি আর তার সঙ্গে কারুর কারুর বমি’র উপসর্গ। এবার, আর এস ভাইরাস (RSV- Respiratory Syncytial Virus) এর প্রভাব তুলনায় কম। তাই, শ্বাসকষ্টে প্রকোপ খুব কম শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। টেস্ট করলে, অনেকেরই আবার কোভিড ধরা পড়ছে। তবে, উপসর্গ খুব সাধারণ। এই সব ক্ষেত্রে ৪-৫ দিনের মধ্যেই শিশুরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি অবশ্যই হচ্ছে। তাদের ক্ষেত্রে এমআইএস- সি অর্থাৎ Multisystem inflammatory syndrome in Children (MIS- C) ধরা পড়ছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি একটু সঙ্কটজনক হয়ে যাচ্ছে। জটিল চিকিৎসা ও মহার্ঘ হিমোগ্লোবিন ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন হচ্ছে। তবে, সুচিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগ শিশুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে।”
তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, “এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus)। গত ২-৩ বছরে দেখছি হঠাৎ করে এর আগমণ! মেদিনীপুর মেডিক্যালেও এর সংখ্যা বাড়ছে। ১৫-২০ জনের অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে পাঠালে ৩-৪ জনের পজিটিভ আসছে। দ্রুত চিহ্নিত করতে না পারলেই সমস্যা। উপসর্গ মোটামুটি ডেঙ্গু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা’র মতোই। জ্বর, বমি, শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। টেস্ট করার পর ধরা পড়লে, প্রয়োজনীয় ওষুধের (অ্যান্টিবায়োটিকের) প্রয়োগে ৫-৭ দিনের মধ্যেই শিশু সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, বাড়িতে ফেলে রাখলে বা উল্টোপাল্টা ওষুধ খাওয়ালেই সমস্যা!” তিনি জানিয়েছেন, “এক্ষেত্রে অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা খুব প্রয়োজনে ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করা হয় পরিস্থিতি অনুযায়ী। তবে, নিজেরা কখনোই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যাবেন না!” সতর্ক করে দিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের বিভাগীয় প্রধান সহ অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। চলতি মরশুমে এবার, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় করোনা বা ডেঙ্গু’র প্রভাব তেমন নেই বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী-ও। তিনি জানিয়েছেন, “এখন প্রতিদিন ৭-৮ জন করে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে মাঝেমধ্যে ২-১ টি শিশু থাকছে। কিন্তু, কোন ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি সেরকম হচ্ছে না! চলতি মরশুমে ডেঙ্গুতে ৩৪ ও ম্যালেরিয়া-তে ২৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন এবং সকলেই এই মুহূর্তে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।” একই কথা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু-ও।
এবার, এক নজরে জেনে নিন এই স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus) সম্পর্কে- মূলত, বর্ষাকালে জলাজমি এবং ঝোপঝাড় থেকে একধরনের মাইটস বা মাকড়ের কামড়ে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার আগে পর্যন্ত বোঝাই যায়না জ্বরের কারণ। কিন্তু, গত দু’এক বছরে কিছু ঘটনা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদেরও। জানা যায়, স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus) এই নামের সৃষ্টি হয়েছে গ্রিক শব্দ Typhus থেকে, যার অর্থ হল- ধোঁয়াটে বা অস্পষ্ট। ট্রম্বিকিউলিড মাইটস বা টিকের (Tick) মতো পরজীবী মাকড়ের কামড় থেকে এই এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। ট্রম্বিকিউলিড মাইটস (Trombiculid Mite) বা টিকের আকার ০.২ মিলিমিটার থেকে ০.৪ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। Scrub Typhus একটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ। ব্যাকটেরিয়ার নাম- ‘Orientia Tsutsugamushi’। গ্রাম-বাংলার কৃষিজীবী মানুষ এই জাতীয় মাকড়ের সঙ্গে ভালোভাবেই পরিচিত। অনেকের বাড়িতে পোষা কুকুর-বেড়ালের থাকলে তাদের শরীরেও এই মাকড়ের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এই মাকড়ের কামড় থেকে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু প্রবেশ করে শরীরে। এর পর জ্বর আসে। জ্বরের তাপমাত্রা কখনও কখনও ১০৩ ছাড়িয়ে যায়। প্রথম সপ্তাহ কাটে জ্বর, বমি ও শরীরে ব্যথা শুরু হয়। চোখের পিছনের অংশেও যন্ত্রণা হয়। ভয়াবহ আকার নেয় দ্বিতীয় সপ্তাহে। Scrub Typhus-এর প্রকোপেও বিভিন্ন অঙ্গ বিকল বা MIS-C হতে পারে। শুরুতেই চিকিৎসা না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়! উপসর্গ হল- জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং বমি। অনেকে সময় শরীরে চিগার মার্ক বা বিশেষ চিহ্ন বা কালো দাগ বা র্যাশ দেখে বোঝা যায় যে কামড় বসিয়েছে ওই মাকড়! কিন্তু, বেশিরভাগ সময় বোঝা যায়না, তাতেই জটিলতা বাড়ে, সাধারণ জ্বর মনে করেন অনেকেই। তাই, “দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে” নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা বিভাগীয় প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৭ অক্টোবর: জেলা শহর মেদিনীপুরের 'সবেধন নীলমণি' সিনেমা হল ছিল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ অক্টোবর: দলীয় রাজনীতিতে দীপক সরকারের অনুগামী হিসেবেই পরিচিত…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ অক্টোবর: প্রয়াত হলেন সিপিআই(এম)-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ অক্টোবর: সোমবার ভোরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ অক্টোবর: খড়্গপুর গ্রামীণের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক সংলগ্ন এলাকায় (জাতীয়…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, নাগরাকাটা, ৬ অক্টোবর: বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন…