দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ সেপ্টেম্বর: চলতি মরশুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলায় দ্বিতীয় মৃত্যু। তাৎপর্যপূর্ণভাবে দু’জনই মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা! মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে মৃত্যু হল তাঁদের। কাকতালীয় হলেও সত্য যে, দু’জনকেই শেষ মুহূর্তে মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়! গত ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় ১৪ নং ওয়ার্ডের চিড়িমারসাই এলাকার বৃদ্ধা ঊষা রানি দাসের। তাঁর মৃত্যুর ক্ষেত্রে বয়স (৭৩) একটা অন্যতম কারণ (ফ্যাক্টর) হলেও, শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৃত শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের স্টেশন সংলগ্ন ভুঁইয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা তীর্থঙ্কর বেরা-র বয়স ছিল মাত্র ২৭। তাঁর পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন। এদিকে, মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধান পর পর দু’জনের মৃত্যুর পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। চিঠিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাত্র ৩-৪ দিন জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরই বছর ২৭’র তীর্থঙ্কর বেরা-কে বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। তবে, ওই দিন তাঁর কোন চিকিৎসাই করা হয়নি বলে অভিযোগ মৃত যুবকের দাদার। শুক্রবার তীর্থঙ্করের (তাঁর ভাইয়ের) শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়! মৃত্যুর পর রিপোর্ট এলে জানা যায় তীর্থঙ্কর ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। তীর্থঙ্করের দাদা প্রভাস বেরা জানান, “২-৩ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। বৃহস্পতিবার সকালে আমরা স্থানীয় কোয়াক ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। কিন্তু, বাড়াবাড়ি মনে হতেই বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ স্পন্দন হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু, প্রথম দিন ওরা কোন চিকিৎসাই করেনি। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়!” ঘটনা ঘিরে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলা শহরে মেদিনীপুরে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডক্টর সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী শনিবার জানান, ” অন্যান্য জেলার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি না হলেও, হঠাৎ করেই পশ্চিম মেদিনীপুরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই, আমরা বারবার বলছি জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করান। রোগীকে বাড়িতে ফেলে রাখবেন না বা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে উল্টোপাল্টা ওষুধ খাওয়াবেন না। দ্রুত সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসুন। গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছেও আবেদন করছি, পরিস্থিতি জটিল মনে হলেই সরকারি হাসপাতালে পাঠান।”
এদিকে, শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টিও স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক। তিনি জানান, ডেঙ্গু চিকিৎসার কিছু সরকারি প্রটোকল বা নিয়ম আছে। তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা জানতে চেয়েই চিঠি পাঠানো হয়েছে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একই সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং মেদিনীপুর পৌরসভার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।” একইসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক জানিয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭২। এর মধ্যে সর্বাধিক আক্রান্ত মেদিনীপুর পৌরসভাতে (৯০)। এছাড়াও, খড়্গপুর পৌরসভা (৭০), বেলদা (৮০), শালবনী (৭৭), দাঁতন (৭৫) এবং ডেবরা (৫৫)-তেও আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে।