দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: “আমার ছেলেকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুকুর বিড়ালের মতো পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ছ’-সাত দিনের লাশকে গতকালের বলে চালানো হচ্ছে!” শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মৃত মেধাবী ছাত্র ফাইজান আহমেদ (Faizan Ahmed)-এর বাবা সেলিম আহমেদ। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রেহানা আহমেদ ও মাসি সালমা আহমেদ। কিছুতেই তাঁরা ফাইজানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না! তাঁদের ছেলে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বাবা সেলিম আহমেদ জানিয়েছেন, “আমরা ইনসাফ চাই। আমাদের ছেলেকে খুন করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের যে মৃতদেহ দেখানো হয়েছে তা আমাদের ছেলের নয়! অনেক স্বাস্থ্যবান এক মৃতদেহ দেখানো হয়েছে। মুখের আদল সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের ছেলে হতেই পারে না! ওকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।” হাউ হাউ করে কাঁদতে কদতে মর্গের সামনেই লুটিয়ে পড়েন মা রেহানা ও মাসি সালমা! শনিবার সন্ধ্যা অবধি এই ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চাঞ্চল্য বজায় আছে। ময়নাতদন্তের পর এখনও ফাইজানের দেহ বের করা হয়নি।

thebengalpost.net
বিস্ফোরক অভিযোগ বাবা-মা’র :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার আইআইটি খড়্গপুরের লালা লাজপত রায় হস্টেলের একটি রুম থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ফাইজান আহমেদের (২৩) দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও আইআইটি কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর সঠিক কারণ না জানালেও, প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যা’ বলেই চালানো হচ্ছিল! তবে, কিভাবে মৃত্যু, তার সঠিক কারণ জানানো হয়নি। মানসিক চাপে বা অসুস্থ হয়েও মৃত্যু হতে পারে বলে একাংশের মত। অন্যদিকে, রাজেন্দ্র প্রসাদ হলের (RP Hall) ছাত্র ফাইজানের দেহ লালা লাজপত রায় হল (LLR Hall) থেকে অন্তত দু’দিন পর উদ্ধার করা হয়েছিল বলেই সূত্রের খবর। কারণ, দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়া, পচা-গলা দেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠালেও, পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর, শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন ফাইজানের বাবা-মা, মাসি সহ আত্মীয় পরিজনেরা। ছিলেন বন্ধু-বান্ধবরাও। তবে, তাঁর বাবা-মা বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে মানতে চাননি! তাঁদের ছেলে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে, ফাইজানের বাবা-মা জানিয়েছেন। আইআইটি খড়্গপুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে, খুনের অভিযোগ করেছেন তাঁরা। যথাযথ তদন্তের দাবিও তুলেছেন। এদিকে, ফাইজানের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিমধ্যে টুইট করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি লিখেছেন, “আইআইটি খড়্গপুরের মেধাবী ছাত্র, তিনশুকিয়ার বাসিন্দা ফাইজানের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে আমি শোকাহত! তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

thebengalpost.net
শোকে আকুল পরিজনেরা:

thebengalpost.net
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sharma)’র টুইট :

thebengalpost.net
বামদিকে ফাইজান (ফাইল ছবি) ও ডানদিকে বাবা-মা (মেদিনীপুর মেডিক্যালে):