দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ নভেম্বর: বিদ্যালয়ের একটি সামান্য নির্বাচনেই যদি শাসকদলের এই তাণ্ডব হয়, তবে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি হতে চলেছে? সেই আতঙ্কই এখন গ্রাস করেছে বিরোধীদল থেকে সাধারণ মানুষকে। মঙ্গলবার ছিল খড়্গপুর শহরের তেলেগু বিদ্যাপীঠের পিআইই (PIE) প্রতিনিধি বা শিক্ষানুরাগী নির্বাচন। প্রার্থী হয়েছিলেন ২ জন। একজন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর (১৫ নং ওয়ার্ডের) বান্টা মুরলীধর রাও। অপরজন এলাকারই প্রাক্তন শিক্ষক এম. কালি দাস। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং অভিভাবক প্রতিনিধি মিলিয়ে ভোটার ছিলেন ১২ জন। এর মধ্যে, প্রধান শিক্ষক গোপন ব্যালটে ভোটদান করেছিলেন। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (SI)-এর উপস্থিতিতে এবং প্রধান শিক্ষকের পরিচালনায় ভোট সম্পন্ন হয় নির্বিঘ্নে। তবে, ফলাফলে হতাশ হতে হয় কাউন্সিলর বান্টা-কে! প্রধান শিক্ষকের গোপন ব্যালট ছাড়াই ৭-৪ ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। আর, এই পরাজয় মেনে নিতে না পেরেই, তাঁর নির্দেশে বিদ্যালয়ে তাণ্ডব দেখান তাঁর কর্মী সমর্থকরা। সঙ্গে তৃণমূলের শহর সভাপতি সূর্যপ্রকাশ রাও ছিলেন বলেও অভিযোগ। এমনটাই অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। শুধু তাই নয়, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে রামচন্দ্র মূর্তি এই বিষয়ে বুধবার টাউন থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন।
যদিও, এসবের পরোয়া না করে, বান্টা মুরলী এই ফলাফল ভেস্তে দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ। শেষমেশ তাঁর চাপের কাছে নতিস্বীকার করে পুনরায় নির্বাচনের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয় বলেও জানা গেছে! বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুনরায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, প্রধান শিক্ষক সহ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খড়্গপুর টাউন থানাতে অভিযোগও জানিয়েছেন। এই ঘটনার বিষয়ে বুধবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি ক্যামেরার সামনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন! স্বীকার করেন, তিনি আতঙ্কে আছেন। অপরদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে বান্টা জানিয়েছেন, “আমাকে অভিভাবকরা আগেই পিআইই (PIE) প্রতিনিধি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্কুল সেটা মানেনি। উল্টে নির্বাচনে কারচুপি করেছিলেন প্রাক্তন ওই শিক্ষক মশাই। তাই, পুনরায় নির্বাচনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি এও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমি যদি গন্ডগোল করতেই চাইতাম, তাহলে তো নির্বাচনে হারতামই না! যা হোক করে জিতে যেতাম!” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের শহর সভাপতিও। অন্যদিকে, ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “আপনারাই বুঝে নিন, রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন কিরকম হবে! মুখ্যমন্ত্রী যতোই ওই সমস্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বুলি আওড়ান না কেন, যাঁরা সামান্য স্কুল নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই করে, তাদের অভিসন্ধি বোঝাই যাচ্ছে।”