দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বর: আদালত অবমাননা মামলায় আপাতত রেহাই পেলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আবেগঘন মুহূর্তে তিনি বলেন, “যারা যোগ্য তাদের আগেও চাকরি দিয়েছি। এছাড়াও, যারা যোগ্য আছে তাদের চাকরি দিতে চাই। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল না বলে দেরি হয়েছে। চাকরি প্রার্থীরা আমার পুত্রসম। আপনার নির্দেশ পাওয়ার পরই মামলাকারীকে চাকরি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও দিয়ে দেব।” প্রসঙ্গত, মামলাকারী নীলোৎপল চ্যাটার্জী’র মামলায় শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সকাল ১১ টায় আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-কে। যথা সময়ে তিনি উপস্থিত হলে, বিচারপতি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ পড়ার পরেও কেন এত দেরি করলেন? ওরা আপনার ছেলের মত, চাকরির জন্য ওদের আদালতে আদালতে ছুটতে হচ্ছে! এখানে ইগো দেখিয়ে লাভ নেই, আপনার ক্ষমতা ও অর্থের সঙ্গে ওরা পেরে উঠবে না। তাই দ্রুত ওদের চাকরির ব্যবস্থা করুন।” সেই মতো মানিকবাবু বলেন, “অর্ডার পেলেই, বাকি যোগ্যদেরও আমরা চাকরি দিয়ে দেব।” উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালে প্রাথমিকের টেটে “৬ টি প্রশ্ন বা উত্তর ভুল ছিল”। সেই মামলাতে, তৎকালীন মামলাকারীদের ৬ নম্বর করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। তবে, সেই মসয় ডি এল এড (D.El. Ed) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা মামলাকারীরাই সরাসরি চাকরি পাবেন। এর কারণ হল, ২০১৪ এর টেটে অর্থাৎ ২০১৭ এর নিয়োগে, সমস্ত d.el.ed প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা চাকরি পাওয়ার পর, প্রশিক্ষণ-হীন রাও চাকরি পেয়েছিলেন। সেই হিসেবে, পাস করলেই, অবশিষ্ট d.el.ed প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের চাকরি পাওয়াতে আইনত আর কোনো বাধা থাকল না! আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “এই ধরনের মোট মামলাকারীর সংখ্যা (২০১৪ তেই ডি এল এড সম্পূর্ণ করা, কারণ সেই সময় প্রাথমিকে বি.এড দের প্রশিক্ষণ গ্রাহ্য ছিলনা) ১৭৫ জন। তাদের সকলকেই সরাসরি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।” তবে, প্রশ্ন ভুল মামলায়, বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের নির্দেশ অনুযায়ী গত ৮ ই জানুয়ারির মধ্যে অফলাইনে জমা করা প্রায় ২০-২৫ হাজার চাকরি প্রার্থীর বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশ আহেনি। সেই মামলা ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন। তবে, এদিনের অর্ডার সেই মামলাতেও মামলাকারীদের পক্ষে রায় হওয়ার পথ অনেকটাই প্রশস্ত করেছে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

thebengalpost.net
মানিক ভট্টাচার্যের হাজিরা আদালতে (ফাইল ছবি) :

অন্যদিকে, ২০০৯ সালের বিজ্ঞপ্তি এবং ২০১০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য সমস্ত জেলা নিয়োগ সম্পূর্ণ করলেও, নানাবিধ মামলার জটিলতা ও সরকারের গড়িমসির কারণে, মালদা ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলার নিয়োগ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল। আদালতের নির্দেশ আসার পরেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সরকার এতদিন নড়েচড়ে বসেনি! অবশেষে, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিল রাজ্য মন্ত্রীসভা। সোমবার বিকেলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এই দুই জেলায় মোট ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে। এজন্য, আরো কিছু শূন্য পদের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পুজোর আগেই সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, দুই জেলার প্যানেল প্রস্তুত হয়ে আছে। তবে, উপ নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে এই ঘোষণায় বিরোধীরা সমালোচনা করেছেন। যদিও, এই দুই জেলায় নির্বাচন হচ্ছে না, তাই এই ঘোষণায় নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে না বলে প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন।