দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ এপ্রিল: ৩১ মার্চ (রবিবার) বিকেলে জঙ্গলমহল শালবনীর পিড়াকাটাতে প্রচার ও কর্মীসভা সেরেই ৪ দিনের ছুটিতে গিয়েছিলেন জুন (জুন মালিয়া)। ‘আত্মবিশ্বাসী’ জুন ওই দিন সন্ধ্যায় দলের “বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন” থিম সং-কে সামনে রেখে নিজের নৃত্য-প্রতিভার স্বাক্ষরও রেখে গেছেন বলে শোনা যায়। জুনের ‘তালে’ পা মিলিয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেপাল সিংহ থেকে যুব নেতা সন্দীপ সিংহ-রাও। ওই দিন রাতেই তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা যায়। জুন মেদিনীপুরে ফিরছেন আজ, শুক্রবার (৫ এপ্রিল)। বিকেল ৫টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের পবিত্র জোড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত হতে চলা পৌরসভার ইফতার পার্টি-তে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। মাঝখানে চারদিন কি ছুটিতে গিয়েছিলেন বিধায়ক তথা লোকসভার প্রার্থী জুন মালিয়া? জুন ঘনিষ্ঠ রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, “না দিদি দলীয় কাজেই গিয়েছিলেন। উনি তো দলের স্টার ক্যাম্পেনার। অন্য জায়গাতেও প্রচারের দায়িত্ব আছে।” জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা থেকে যুব সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী-রাও জানান, দলের কাজেই গিয়েছিলেন! জুনকে নাকি দেখা যায়নি বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) মেদিনীপুর শহরের জেলা কার্যালয়ে (নান্নুরচকে) অনুষ্ঠিত রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর বৈঠকেও? জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “আমি নিজেও ঝাড়গ্রামে গিয়েছিলাম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে, নির্বাচনী কমিটির প্রস্তুতি বৈঠকে। মেদিনীপুর শহরের জেলা কার্যালয়ে রাজ্য সভাপতি এসেছিলেন। প্রার্থী না থাকলেও প্রস্তুতি বৈঠক সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

thebengalpost.net
খড়গপুরে জুন মালিয়া:

অন্যদিকে, মেদিনীপুরের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। দিলীপ ঘাঁটিতে পৌঁছেই অগ্নি’র চ্যালেঞ্জ, “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র (সূচ্যগ্র) মেদিনী!” মেদিনীপুর শহরে পৌঁছনোর পর থেকে মাঝখানে একদিন মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেটাও আবার সকালে প্রচার সেরে। তারপর টানা প্রচার করে গিয়েছেন মেদিনীপুর লোকসভার অধীন ৭টি বিধানসভার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে! আজ, শুক্রবার ফের অগ্নিমিত্রা কয়েক ঘন্টার জন্য কলকাতায় গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে জেলা বিজেপি সূত্রে। “দিদিভাই রাতেই ফিরবেন” বলে জানিয়েছেন জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস। তিনি অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি জুনের চারদিনের ‘ছুটি’-তে যাওয়াকেও। অরূপ বলেন, “মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক মাটি চোর-কাটমানি খোর-তোলাবাজদের সমর্থন করবেনা বুঝতে পেরেই উনি রণে ভঙ্গ দিয়েছেন! দলীয় কাজের অজুহাত দিয়ে আসলে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। জানেন তো হারতে হবেই! দিলীপ দা ৮৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন, অগ্নিমিত্রা পাল দিদিভাই কমপক্ষে দেড় লক্ষ ভোটে জিতবেন!” বিজেপি-র কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা-ও। বৃহস্পতিবার রাতে সুজয় বলেন, “মেদিনীপুরের ইতিহাস, সংস্কৃতি কিছুই উনি (অগ্নিমিত্রা পাল) জানেন না। আসানসোলে নিজের বিধানসভা এলাকায় কোনো কাজই করেননি। উপনির্বাচনে ওই বিধানসভায় আমাদের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা প্রায় ৫০ হাজার লিড পেয়েছিলেন। আর মেদিনীপুর লোকসভাতে দিলীপ বাবুও কোনো কাজ করেননি বলে তাঁর নিজের দলই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বর্ধমানে পাঠিয়েছেন। তাঁর অনুগামীরা তো ক্ষেপে আছেন বলে শুনছি! কয়েক লক্ষ ভোটে হারার জন্য প্রস্তুত থাকুন।” সেজন্যই কি আপনাদের প্রার্থী ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী‘? সুজয় শোনান, “প্রার্থী না থাকলেও প্রতিটি বুথ ধরে ধরে বৈঠক, কর্মীসভা- সবকিছুই চলছে।” কিন্তু, খড়্গপুরে নাকি টাকার অভাবে বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রচার শুরু করাই যায়নি? জেলা সভাপতি বলেন, “কোথাও প্রচার আটকে নেই। হয়তো কোথাও কম, কোথাও একটু বেশি হয়েছে। হাতে দেড় মাসের বেশি সময় আছে, হয়ে যাবে। এ নিয়ে বিজেপি-র উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ, খড়্গপুরবাসী রেল আর দিলীপ ঘোষের উপর ক্ষেপে আছেন! বিজেপি প্রার্থী তা হাড়ে হাড়ে টেরও পাচ্ছেন।”

মেদিনীপুরের রাজনীতি-সচেতন নাগরিকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নির্বাচনের ফল বেরোবে জুনে (৪ জুন)। প্রকৃতির নিয়মে তখন শোনা যাবে বর্ষার পদধ্বনি! তবে, থাকবে গরমের দাপটও। আর, রাজনীতির নিয়মে? গনগনে আঁচে টগবগ করে ফুটবেন বঙ্গের শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। মেদিনীপুরের হাওয়াও যে ‘গরম’-ই থাকবে তা বলাই বাহুল্য! তা সে যতই ‘বৃষ্টি’ নামুকনা কেন! প্রসঙ্গত, ইতিহাস-বিজড়িত অখন্ড মেদিনীপুরের মেদিনীপুর লোকসভায় লড়াই যে এবার দ্বি-মুখী, আড়ালে-আবডালে তা মানছেন বিপ্লব-পন্থীরাও (পড়ুন, বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্টের সমর্থকরাও)। একদিকে, মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক জুন মালিয়া। অন্যদিকে, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী! দিলীপ দা তাঁর কাজ এবং সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমার কাজ সহজ করে গিয়েছেন ঠিকই, তবে আমি কঠোর পরিশ্রমের পক্ষপাতী। একটাই বার্তা, নরেন্দ্র মোদীর হাত আরও শক্তিশালী করুন। এই ভোট দেশের স্বার্থে ভোট। নারী নির্যাতনকারী সেখ শাহজাহান, রেশন চুরি করা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, চাকরি চুরি করা পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের হয়ে সওয়াল করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে একটাও ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা।” ‘আত্মবিশ্বাসী’ জুনের আবশ্য হাসিমুখে উত্তর, “মেদিনীপুরের মাটিতে বন্ধু অগ্নিমিত্রাকে স্বাগত! তবে, বাংলায় মোদীর গ্যারান্টি চলেনা, এখানে শুধুই দিদির গ্যারান্টি। বঞ্চনার প্রতিবাদে বঙ্গবাসী তথা মেদিনীপুরবাসী এবার বিজেপি-কে ‘বিসর্জন’ দিতে প্রস্তুত!” পাল্টা অগ্নিমিত্রা জানান, “যুদ্ধে বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধু এসব হয়না। যুদ্ধ যুদ্ধই হয়। আর, আমার লড়াই জুন মালিয়া-র বিরুদ্ধে নয়, সেক শাহজাহানদের মতো অসুরদের আগলে রাখা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে!” এদিকে, দু’পক্ষের নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরই দাবি, “ব্যবধান হবে দেড় লক্ষেরও বেশি!” কিন্ত কোন অঙ্কে ‘দেড় লক্ষ’? বিজেপি-র এক জেলা নেতার দাবি, “দিলীপ দা জিতেছিলেন ৮৬ হাজার ভোটে। তখন মানুষ বান্ধবীর খাটের নীচে কোটি কোটি টাকার বান্ডির দেখেননি, রেশন চুরি বুঝতে পারেননি, আর সন্দেশখালিও দেখেননি! আর তাছাড়াও অগ্নিমিত্রা দি লড়াকু নেত্রী। ব্যবধান বাড়বেই।” তৃণমূলের এক শিক্ষক নেতা শোনাচ্ছেন, “ওরা ভুলে যাচ্ছে তখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও ছিলোনা! তাছাড়া, বিপক্ষে দিলীপ ঘোষ থাকলে, ব্যবধান হয়তো ৫০ হাজার হতো। কিন্তু, অগ্নিমিত্রা পালকে মেদিনীপুরের মানুষ চেনেনই না! ব্যবধান কমপক্ষে দেড় লক্ষ হবে।” এসব শুনে ‘অন্তর্যামী‘ যে হাসছেন, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পাল: