দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি: এক এক করে ৮-টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন! অভাবের তাড়নায় সদ্যজাত ‘অষ্টম’ সন্তানকে নাকি অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। যদিও, এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজদের সদ্যজাত কন্যা সন্তানকে ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিলেন শিবানী সিং ও অমরনাথ দাস! যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করে শিবানী-র ‘সহজ’ স্বীকারোক্তি, “বিক্রি করিনি স্যার! মানুষ করতে পারবনি (পারবনা) বলে, মানুষ করার জন্য, লেখাপড়ি (লেখাপড়া) করানোর জন্য দাদার (পাতানো দাদা) হাতে তুলে দিয়েছিলাম!” ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে অবস্থিত ফুলপাহাড়ি এলাকার। যদিও, পেশায় রাজমিস্ত্রি অমরনাথ ও গৃহ পরিচারিকা শিবানী-র বাড়ি মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়ায়। ফুলপাহাড়িতে ছোট একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। এর আগে, ৬টি মেয়ে ও ১টি ছেলের জন্ম দিয়েছেন বছর ৩৫-৪০’র এই দম্পতি! তারা অবশ্য ওই দম্পতির সঙ্গেই থাকে।

thebengalpost.net
সাত সন্তানকে নিয়ে শিবানী:

তবে, নিজেদের সদ্যজাত ‘অষ্টম’ সন্তান (কন্যা সন্তান)-কে যে অভাবের তাড়নায় অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা স্বীকার করেছেন শিবানী। আজ, রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিবানী জানায়, ৭-টি সন্তান জন্ম দেওয়ার পর, লকডাউনের সময় (অতিমারী পর্বে) নাকি স্বাস্থ্যকর্মীরা লাইগেশন বা বন্ধ্যাকরণের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল বলে নাকি বন্ধ্যাকরণ বা লাইগেশন করাননি তিনি! এরপর, গত ১৭ জানুয়ারি (২০২৪) অষ্টম সন্তানের জন্ম দেন ওই দম্পতি। আর তার কয়েকদিন পরই (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে) সদ্যোজাত ওই কন্যা সন্তান-কে শালবনীর গোদামৌলি-র এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছিলেন অমরনাথ ও শিবানী। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল ওরা।” স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মৌসুমী দত্ত রবিবার দুপুরে বলেন, “ওই মহিলা এই এলাকার (ফুলপাহাড়ির) নন। তবে, ওর যখন সন্তান হয়েছিল তখনও দেখেছি। তারপর এলাকাবাসীরা বলে যে বাচ্চাটাকে বেচে দিয়েছে!” সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জেলার চাইল্ড লাইন বা শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা রবিবার বিকেলেই সদ্য যতই শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে তথা সরকারি হোমে পাঠিয়েছেন।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, প্রত্যেকের দাবি পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “বাচ্চা এইভাবে কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না। এর একটা আইনগত পদ্ধতি রয়েছে। এটা অপরাধ। যদি কেউ করে থাকেন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।” অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, “দরিদ্র এই দম্পতির কিভাবে একটার পর একটা সন্তান হয়ে গেল? সরকারের এত প্রচার, সচেতনতামূলক কর্মসূচি না হয় ওদের কাছে পৌঁছয়নি! কিন্তু, স্থানীয় প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এতদিন কি করছিলেন?” উত্তর নেই কারুর কাছেই!

thebengalpost.net
ফুলপাহাড়িতে ভাড়া বাড়ির সামনে :