দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি: তাঁর নজর সবদিকে। আরও একবার বোঝালেন। কেন তিনি দলের কর্মী-সমর্থক থেকে বাংলার অসংখ্য মানুষের ‘নয়নের মণি’, তাও যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন। ‘দিদি’র ভালোবাসা এবার মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলেন জেলা শহর মেদিনীপুরের দুই যুবক। পেশায় তাঁরা বিএসকে (বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের) কর্মী। প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ছিল তাঁর সরকারি পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত সভা। বুধবার বিকেল ৩টে ৪০ নাগাদ হেলিকপ্টারে করে পৌঁছেছিলেন মেদিনীপুর শহরের কলেজ কলেজিয়েট মাঠে। তারপর, উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে রওনা দিয়েছিলেন শহরের সার্কিট হাউসের উদ্দেশ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কলেজ মাঠের পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে ভবঘুরে আবাস, মেডিক্যাল কলেজ, লাইব্রেরী রোড দিয়ে এলআইসি, কালেক্টরেট হয়ে রওনা দিয়েছিল। ঠিক জেলা গ্রন্থাগার (বা, ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরী/ District Library) এর সামনেই হঠাৎ থমকে যায় কনভয়। ঘটে সেই ঘটনা! দেখা যায়, দুই যুবক পুলিশের নজর এড়িয়ে, নিরাপত্তার বেড়ি (দড়ি) টপকে ছুটে চলে যান একেবারে দিদির দুধসাদা স্করপিও গাড়ির সামনে। স্বাভাবিকভাবেই, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশকর্মীদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়! যদিও, দিদির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের এসবের জন্য প্রস্তুত থাকতেই হয়। তাঁরা জানেন প্রায়ই ঘটে এমন ঘটনা। গাড়ি থামিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিনও তাই হয়েছিল।

thebengalpost.net
দিদির কাছে:

দুই যুবককে ফুল হাতে ছুটে আসতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেন। এদিকে, দুই যুবক (সঙ্গে অবশ্যই আরও ২-৩ জন ছিলেন) ‘দিদি দিদি’ চিৎকার করতে করতে ততক্ষণে প্রায় পৌঁছে গেছেন ‘দিদি’র সামনে। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলার অনুমতি দেন দুই যুবককে। তারপরই তাঁর ব্যক্তিগত রক্ষীরা বাকিদের সরিয়ে দিলেও দুই যুবককে সুযোগ করে দেন। বড়জোর ১-২ মিঃ কথা বলেন দুই যুবক। তারপরই মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি রওনা দেয় গান্ধী মোড় হয়ে সার্কিট হাউসের দিকে। তবে, এর মধ্যেই ঘটে যায় আরও এক ঘটনা, যা হয়তো স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর এড়িয়ে যায়নি! আর, এর প্রমাণ মেলে ঘটনার প্রায় ৩-সাড়ে ৩ ঘন্টা পর। জানা যায়, ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যখন সবে ওই দুই যুবককে পেরিয়ে সামনের দিকে এগোনো শুরু করে, তার মধ্যেই কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মী ওই দুই যুবককে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। বলেন, “খুব বাজে করলে কিন্তু কাজটা! খুব বাজে করলে।” (ভাইরাল একটি ভিডিওতে যে কথা স্পষ্ট শোনা গেছে।) ঘড়ির কাঁটায় সময়টা তখন ছিল বিকেল চারটা-সাড়ে চারটা। এরপরই ওই দুই যুবক নিজেদের কর্মস্থলে অর্থাৎ জেলা গ্রন্থাগারে অবস্থিত জেলা প্রশাসনের বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁদের ডিউটিও শেষ হয়। তারপরই নাকি বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭-টা নাগাদ জেলা গ্রন্থাগারে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ কর্মী (CM Security Officers)। ওই সময় জেলা গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জানান, “ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা দু’জন অফিসার আসেন।‌ তাঁরা নিজেদের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী বলে পরিচয় দেন। ওদের দু’জনকে খোঁজেন। আমি জানাই, ওদের ডিউটি সাড়ে পাঁচটায় শেষ হয়েছে। তারপরই ওঁরা বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছেন। আসলে ওরা আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল বলে, স্থানীয় এক পুলিশ কর্মী ওদের বকাঝকা করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তা টের পেয়েছিলেন। তাই, আমাদেরকে পাঠিয়েছেন ওদের আশ্বস্ত করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী ওই দুই যুবককে ভালো করে নিজেদের কাজ করতে বলেছেন’। এই বলে ওঁদের একজনের ফোন নম্বর দিয়ে চলে যান।”

জানা যায়, সেদিন যে দুই বিএসকে কর্মী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন, শহরেরই দুই যুবক প্রসেনজিৎ বেরা (মুন্না) ও অরিজিৎ মুখার্জি। এই ঘটনা জানা জানি হওয়ার পর, শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তাঁদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করলে, দুই যুবক পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করেন। জানান, “আমরা মনে করি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অন্নদাত্রী। তাঁর জন্যই আমরা আজ স্বনির্ভর হতে পেরেছি। তাই, দিদিকে কাছে পেয়ে, তাঁর হাতে ফুল তুলে দিয়ে, প্রণাম করতে ছুটে গিয়েছিলাম পুলিশের ভয়ডর উপেক্ষা করেই।” কি বলেছিলেন দিদিকে? প্রসেনজিৎ জানান, “বারবার দিদিকে বলছিলাম, দিদি আপনি আমাদের অন্নদাত্রী, দয়া করে কয়েক মিনিটের জন্য আমাদের এই বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে বা জেলা গ্রন্থাগারে চলুন। দিদি মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং বলেন, ‘আজ নয় বাবা, পরে কোনো সময় সুযোগ হলে নিশ্চয়ই যাবো।’ আমাদের ভালো করে কাজ করতে বলে চলে যান।” এরপর কি হয় জিজ্ঞেস করলে দুই যুবক জানান, “এক পুলিশ কর্মী আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। সম্ভবত কোতোয়ালি থানার কর্মী। তখনও দিদির গাড়ি ১০ মিটারও এগোয়নি, উনি অসম্মানজনক কথা বলতে শুরু করেন। তবে, ভাবতেও পারিনি, ওই পুলিশ কর্মীর কথাবার্তা বা ব্যবহার দিদির নজর এড়িয়ে যায়নি! আমরা ধন্য!” দুই যুবক বলেন, “হয়তো দিদি নিজের কানে শুনতে পেয়েছিলেন বা লুকিং গ্লাসে সব কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। কিংবা, তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যে কেউ হয়তো দিদির কানে কথাটা পৌঁছে দিয়েছিলেন। এরপরই ওই ঘটনা ঘটে। এখনও ভাবতে পারছিনা!” আপনারা কি ওই ‘ফোন নম্বরে’ কথা বলেছিলেন? প্রসেনজিৎ ও অরিজিৎ জানান, “অবশ্যই কথা বলেছিলাম। উনি সবটা আমাদের বুঝিয়ে বলেন ও আশ্বস্ত করেন। এও জানান, ‘দিদি বলেছেন তোমাদের ভালো করে কাজ করতে।’ ওই পুলিশ কর্মীর ব্যবহারে রাগ না করতেও বলেন।” ঘটনার প্রায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও, ওই দিনের ঘটনা আর দিদির ভালোবাসার আবেশ মেখে বন্ধু মহলে এখন ‘বুক ফুলিয়ে’ ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রসেনজিৎ আর অরিজিৎ!

thebengalpost.net
কথা বলছেন দিদির সঙ্গে: