মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ অক্টোবর: “জঙ্গলমহলের প্রতি তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) সর্বাত্মক উদ্যোগ, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলার ইতিহাসে সত্যিই এক বিরলতম ঘটনা! আমার মনে হয়না এর আগে কোনো মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের প্রতি এত মনোযোগ, ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন। জঙ্গলমহলের জীবন-যাপন, জঙ্গলমহলের শিল্প-ভাবনা, জঙ্গলমহলের খেলাধুলা থেকে জঙ্গলমহলের শিল্প-সংস্কৃতি, সবকিছুতেই জঙ্গলমহলের বিকাশ আজ নতুন ঊষার স্বর্ণদ্বারে এসে দাঁড়িয়েছে।” শনিবাসরীয় (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসব’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঠিক এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। উল্লেখ্য যে, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-র উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সহযোগিতায় শনিবার থেকে দুই দিন (৭ ও ৮ অক্টোবর) ব্যাপী ‘জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসব’ এর সূচনা হয়েছে ঐতিহাসিক মেদনীপুর কলেজে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এই আয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মেদনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্রাত্য। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা আন্দোলনে দেড়শত বর্ষ প্রাচীন ও ঐতিহ্যমন্ডিত মেদনীপুর কলেজের ইতিহাসও স্মরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। ঠিক একই কারণে কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক রাজনারায়ণ বসু, নাট্যকার শিশির ভাদুড়ির স্মৃতিধন্য শহর মেদিনীপুর-কেও।

thebengalpost.net
মঞ্চে অতিথি বরণ:

তাঁদের আমলে (বর্তমান সরকারের আমলে) সংস্কৃতি জগতের ‘আমরা-ওরা’ বিভেদ মুছে, জঙ্গলমহল তথা সারা রাজ্যের বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষজনকেই যে এই জঙ্গলমহল উৎসবে আহ্বান জানানো হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-র সভাপতি ব্রাত্য বসু। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের (সুপ্রিম কোর্টের) সাম্প্রতিক নির্দেশকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে এদিন ব্রাত্য বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আসার পর আমরা আশা করছি, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আবার প্রকৃত শিক্ষাবিদদের উপাচার্য হিসেবে পাঠাতে পারব। এবং তা আমরা আলোচনা ক্রমেই পাঠাবো; কোন ‘একগুঁয়েমি’ মনোভাব থেকে চাপিয়ে দেওয়া হবেনা!” এদিন মঞ্চ থেকেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. শিবাজী প্রতিম বসু-কে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-র সদস্য হিসেবে আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সনিযুক্তি দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, কবি সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, লেখক ও সাংবাদিক প্রচেত গুপ্ত, অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। জঙ্গলমহলের ‘ভূমিকন্যা’ তথা মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসবের জন্য জঙ্গলমহলকেই বেছে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আবেদন জানাবো আগামীদিনে আমার ঝাড়গ্রাম শহরেও এমন আয়োজন করা হোক। জঙ্গলমহলের ছেলে-মেয়েরা যদি বইয়ের জগতে ফিরে যায়, তবে তাদের জ্ঞানের ভান্ডার যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনই মন থেকে স্বার্থপরতা মুছে যাবে।” আগামী বছর ‘জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসব’ ঝাড়গ্রাম শহরে অনুষ্ঠিত হবে বলে এদিন অবশ্য জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-র সভাপতি ব্রাত্য বসু।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর কলেজের বিবেকানন্দ সভাগৃহের মঞ্চে: