দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ মার্চ: “জুন আমার অত্যন্ত প্রিয়। সুজয় তুমি জুনকে দিদির মতো মেনে চলবে। তোমরা এক হয়ে চল। আগেও বলেছি আমি। জুন তুমি সুজয়-কে মিষ্টি খাইয়ে দিও তো! আর সুজয় তুমি জুনকে চা খাইয়ে দেবে।” মেদিনীপুর শহরের সার্কিট হাউসে পৌঁছেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই সাংগঠনিক জেলার (মেদিনীপুর ও ঘাটাল) নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখান থেকেই তিনি তাঁর ‘প্রিয়’ জুন মালিয়া (মেদিনীপুরের বিধায়ক) এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা-কে ফের একবার ‘এক হয়ে’ চলার বার্তা দিলেন লোকসভা নির্বাচনের ‘প্রার্থী ঘোষণা’র ঠিক প্রাক্কালে! উল্লেখ্য, সোমবার জেলা শহর মেদিনীপুরের বিধাননগর মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামার পর মুখ্যমন্ত্রী পায়ে হেঁটে সার্কিট হাউসে প্রবেশ করেন বিকেল ৩টা নাগাদ। দলের ‘রুদ্ধদ্বার’ সাংগঠনিক বৈঠক শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৩-টা নাগাদ।

thebengalpost.net
মেদিনীপুরে মমতা:

বৈঠকের শুরুতেই অবশ্য বরাবরের মতো চমকে দেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিংলার বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি-কে দেখেই বলেন, “অজিত তোমার হার্টের অপারেশন (অস্ত্রপচার) হয়েছে? আমি জানতাম না। যাই হোক, তোমার শরীর খারাপ, আসার প্রয়োজন ছিলোনা। তুমি এখন বিশ্রাম নাও। কালকেও তোমার আসার প্রয়োজন নেই। এখন ১৫ দিন বিশ্রাম নাও। তোমার ব্রিগেডেও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সুস্থ হয়ে কাজ শুরু করবে।” অন্যদিকে, অজিত দিদি-কে “সুস্থ আছি” বলার চেষ্টা করলেও, সুপ্রিমো কোনো কথা শুনতে রাজি হননি! এরপরই তিনি জুন-সুজয়কে ফের একবার চলার বার্তা দেন। প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে জুন-সুজয়ের শীতল-সম্পর্কের বিষয়টি এখন সর্বজনবিদিত। অন্যদিকে, জুন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় পাত্রী; আবার সুজয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ঘনিষ্ঠ’ দলের একনিষ্ঠ সংগঠক। বিশেষ সূত্রে খবর, মেদিনীপুর লোকসভা আসনে জুন-কেই প্রার্থী হিসেবে ভেবে রেখেছেন দিদি তথা দলনেত্রী! অন্যদিকে, সুজয়-ঘনিষ্ঠ জেলার নেতারা মুখে কিছু বলতে না চাইলেও; জুনকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা চান সুজয়-ই প্রার্থী হোক। খড়্গপুরের এক নেতা জানান, “সুজয় দা এই দু-এক বছরে সংগঠনের জমি যেভাবে উর্বর করে তুলেছেন, সেই মাটিতে অন্য কেউ ফসল ফলাবেন; আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে!” এমন কিছুর আভাস পেয়েই হয়তো এদিন ফের একবার নেত্রী জুন-সুজয়কে ‘এক’ হওয়ার বার্তা দেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে, জুন মালিয়া-র পরিবর্তে ‘বিকল্প’ হিসেবে মেদিনীপুর লোকসভায় রচনা ব্যানার্জি বা অন্য কাউকে আনা হতে পারে। যদিও, স্বয়ং দলনেত্রী নাকি রচনা ব্যানার্জির জন্য তমলুক আসনটি ভেবে রেখেছেন। এসবের মধ্যেই এদিনের বৈঠকে শহর মেদিনীপুরে মাত্রাতিরিক্ত বহুতল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পৌরপ্রধান সৌমেন খান-কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, কোনোভাবেই মেদিনীপুর শহরে ১০-১২ তলার মতো বহুতল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। ৬-৭ তলা পর্যন্ত অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, সৌমেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি সম্পর্কে দিদির কাছে অনুযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান তাঁর এলাকায় ব্লক সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতিদের দ্বারা ‘অপমানিত’ হচ্ছেন বলে দিদি’র কাছে অভিযোগ করেন। এই বিষয়টি দেখার জন্য সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া-কে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-কেও নির্দেশ দিয়েছেন, “বিক্রম দা আমাদের দলের অনেক পুরানো কর্মী। ওঁর সঙ্গে আলোচনা করে অঞ্চল সভাপতি ঠিক করবে।” সার্বিকভাবে দুই সাংগঠনিক জেলায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়াকেই। এছাড়াও, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফের একবার ঘাটাল লোকসভার প্রার্থী হিসেবে দেব-র (দীপক অধিকারীর) নাম নিশ্চিত করেছেন। এই মুহূর্তে তাঁর চিন্তা শুধু মেদিনীপুর লোকসভা নিয়েই!