দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: রেল, গ্রুপ-ডি কিংবা সিকিউরিটি গার্ড- টাকা দিলেই চাকরি! আর নাহলে নিজের (‘ভুয়ো’) বায়োগ্যাস কোম্পানি তো আছেই! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর, খড়গপুর, ঘাটাল, আনন্দপুর, কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়, গোপীবল্লভপুরেও প্রতারণার জাল বিছিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের যুবক। দুই জেলার অন্তত ১০০-১৫০ জন যুবক যুবতীকে ঠকিয়ে তাঁদের কাছ থেকে গড়ে এক থেকে দেড় লক্ষ করে নিয়েছিলেন। কারুর কাছ থেকে আবার ৩-৪ লক্ষ টাকাও। টাকা দেওয়ার সাথে সাথেই একেবারে ‘হাতে গরম’ ভুয়ো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার থেকে শুরু করে সচিত্র পরিচয় পত্র বা আইডেন্টিটি কার্ডও দিয়ে দিচ্ছিলেন! কাউকে দু’মাস, কাউকে তিন মাস আবার কাউকে আট মাসের পর্যন্ত বেতনও দিয়েছেন। এভাবেই গত ৪-৫ বছর ধরে প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন জেলা শহর মেদিনীপুরের যুবক পার্থপ্রতিম হাটুই। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মেদিনীপুর শহর থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শনিবার দুপুরে তাকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পার্থপ্রতিম হাটুই নামে বছর ৩৫-র ওই প্রতারক মেদিনীপুর শহরের ‘প্রাণকেন্দ্র’ কেরানীটোলাতে (মোহনানন্দ স্কুলের সামনেই, সর্বমঙ্গলা হোটেলের দোতলায়) নিজের পেল্লাই অফিসও করেছিলেন। এরপর, গত এক-দেড় বছরের মধ্যে তাঁর নামে একাধিক FIR হওয়ার পর থেকেই প্রায় ৮-১০ মাস ধরে গা ঢাকা দিয়েছিলেন! শেষমেশ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মেদিনীপুর শহরেরই একটি মন্দির থেকে প্রতারককে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শুক্রবার ওই যুবককে মেদিনীপুর আদালতে তোলার সময়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ২০-৩০ জন যুবক-যুবতী জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা ‘চোর চোর’ স্লোগানও দেন! বেশিরভাগ যুবক-যুবতীরা মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি, সাঁকোটি প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও, খড়্গপুর, আনন্দপুর, ঘাটাল থেকেও এদিন ১০-১৫ জন প্রতারিত যুবক-যুবতী এসেছিলেন। উত্তম মল্লিক নামে পাঁচখুরি এলাকার এক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ছেলে, ভাগ্না, ভাগ্নি সহ শুধু আমারই ২০-৩০ জন আত্মীয়-পরিজনকে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে! একজনের কথায় বিশ্বাস করে তিন-চার বছর আগে ওকে টাকা দিয়েছিলাম। এখন টাকা ফেরত না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই!”

ঘাটালের মৌসুমি সিট থেকে আনন্দপুরের আনন্দ সিং- সকলকেই এক-দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভুয়ো এপয়েন্টমেন্ট লেটার কিংবা আই-কার্ড দিয়েছিলেন ওই প্রতারক। লকডাউনের সময় প্রত্যেকের একাউন্টে বেতন হিসেবে দু-চার হাজার টাকা করে মাসে মাসে পাঠিয়েও দিতেন। কাজ না করেও, মাসে মাসে টাকা পেয়ে বক বক খুশি ছিলেন প্রতারিতরাও! এভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে আরো চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম হাটুই নামে ওই যুবক। এরপর, ধীরে ধীরে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সব কিছু পরিষ্কার হতে শুরু করে! তাঁরা টাকা ফেরত চাইলে প্রথমে হুমকি এবং পরে কোতোয়ালি থানায় একাধিক FIR হওয়ার পর, গা ঢাকা দেন ওই যুবক। বৃহস্পতিবারই মেদনীপুর শহরে ওই যুবক এসেছিলেন বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। গভীর রাতে শহরের একটি কালী মন্দির থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা শহর মেদিনীপুরে।

thebengalpost.net
প্রতারিতরা:

thebengalpost.net
গ্রেফতার গুনধর :