দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: “তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও…!” জীবন-পথের অন্তিম ঠিকানা মৃত্যু। সে চরম সত্য, সর্বশক্তিমান। ক্ষমা করে না কাউকেই! তাকে কেউ হারাতেও পারে না। তবে, হেরে যাওয়ার আগের মুহূর্ত অবধি যাঁরা নিজেদের কর্ম, নিষ্ঠা, সেবা আর ভালোবাসা দিয়ে ‘জীবনের জয়গান’ গেয়ে যান; তাঁরাই আলোর পথযাত্রী, তাঁরাই ‘আলোর ফেরিওয়ালা’! দুরারোগ্য কর্কট রোগ (ক্যান্সার/Pancreatic cancer)-র সঙ্গে এক ‘অসম’ লড়াইয়ে হার মেনে বিদায় নেওয়ার আগে অবধি নিজের কর্ম, ব্যক্তিত্ব, জীবনদর্শন আর মানবসেবার মধ্য দিয়ে সমাজপথে সেই আলোই ছড়িয়ে গেলেন ‘মেদিনী-রত্ন’ মৌসম মজুমদার (১ আগস্ট, ১৯৭৬ – ২৭ নভেম্বর, ২০২৪)। অখণ্ড মেদিনীপুরের এই ‘সুসন্তান’ বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তমলুকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। একাধারে শিক্ষক, লেখক, গবেষক, প্রতিবেদক, কুইজ মাস্টার, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী এবং মোটিভেশনাল স্পিকার মৌসম মজুমদার ২০২২ সালে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তবে, তার অনেক আগেই শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি জগতের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ রূপে একাধিক পুরস্কার ও সম্মানননায় ভূষিত হয়েছেন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির এই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

thebengalpost.net
বিদায় মৌসম:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সংলগ্ন আস্তাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৌসম মজুমদার একজন লেখক ও সম্পাদক হিসেবে ‘ভারতরত্ন এপিজে আবদুল কালাম’; ‘মানবরত্ন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’; ‘অগ্নিকিশোর ক্ষুদিরাম বসু’; ‘চেনা অচেনা সুন্দরবন’; ‘জেনারেল নলেজ এনসাইক্লোপিডিয়া’; ‘কুইজে বিবেকানন্দ’; ‘কুইজে বিবেক দর্শন’-র মতো ৪৫টি উল্লেখযোগ্য বই ছাত্রছাত্রীদের জন্য সৃষ্টি করে গেছেন। ভূগোলের শিক্ষক (বহিচাড় বিপিন শিক্ষা নিকেতন) হিসেবে লিখেছেন অসংখ্য সহায়িকা বই। এছাড়াও, তাঁর রচিত ও সম্পাদিত কুইজ, পরিবেশবিদ্যা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বইগুলি ছিল বেশ জনপ্রিয়। মানবসেবা তথা সমাজসেবার ‘বার্তা’ ছড়িয়ে দিতে ‘মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুইজ অন্ত প্রাণ এই মানুষটি। তাঁর আদর্শ ও স্বপ্নকে পাথেয় করেই বর্তমানে অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা সমগ্র বাংলা জুড়ে নিজেদের সমাজসেবা ও কর্মকান্ডের ছাপ রেখে চলেছে মৌসম মজুমদার প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি।

thebengalpost.net
‘শিক্ষারত্ন’ ড. মৌসম মজুমদার:

জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ক্যান্সার (Pancreatic cancer) ধরা পড়ে তমলুকের বহিচাড় বিপিন শিক্ষা নিকেতন (উঃমাঃ)-র ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক মৌসম মজুমদারের। তবে, সহজে হার মানেন নি অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই লড়াকু শিক্ষক ও গবেষক! মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে চলে দীর্ঘ লড়াই। প্রায় বছর দেড়েক টানা চিকিৎসা চলার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে মাস ছয়েক আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু, মাসখানেক আগে ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। চিকিৎসকদের শত চেষ্টাতেও এবার আর শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি! গত বুধবার (২০ নভেম্বর) নাগাদ শারীরিক কষ্ট চরম অবস্থায় পৌঁছয়। তড়িঘড়ি তমলুকের একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তবে, ‘দুর্বল’ শরীরে এই মারণ রোগের সাথে আর যুঝে উঠতে পারেননি তিনি! আজ, বুধবার (২৭ নভেম্বর) ওই বেসরকারি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘গর্ব’, একাধারে ‘শিক্ষারত্ন’ ও ‘সমাজরত্ন’ ড. মৌসম মজুমদার। দেহ দানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁর দেহ দান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ড. মজুমদার রেখে গেলেন তাঁর মা, স্ত্রী ও দুই কন্যা সহ কুইজ কেন্দ্রের ‘প্রিয়’ সৈনিকদের। তাঁর প্রয়াণে কুইজ কেন্দ্রের তরফে শোকবার্তায় জানানো হয়েছে, “আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. মৌসম মজুমদার দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন। আজ তাঁর যন্ত্রণামুক্তি ঘটেছে!” এ যেন রবি ঠাকুরের ভাষায়, “আজিকে হয়েছে শান্তি, জীবনের ভুলভ্রান্তি/ সব গেছে চুকে/ বলো শান্তি, বলো শান্তি/ দেহসাথে সব ক্লান্তি/ হয়ে যাক ছাই।”

thebengalpost.net
লড়াইয়ের এক বার্তার নাম মৌসম মজুমদার: