দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ ফেব্রুয়ারি: গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর চ্যাংশোলে ভয়াবহ পথ-দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজের নিউট্রিশন অনার্সের প্রথম বর্ষের দুই ছাত্র শুভজিৎ দোলই এবং জিতেন্দ্রনাথ পাত্র। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুভজিৎ-কে ওইদিনই মেডিক্যাল কলেজের ICU-তে ভর্তি করা হয়েছিল। এই মুহূর্তে জিতেন্দ্রনাথের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও; শুভজিৎ-র অবস্থা আরো সংকটজনক হয়েছে বলে হাসপাতাল ও কলেজ সূত্রে খবর। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের তরফে পাওয়া খবর অনুযায়ী, কেশপুরের বাসিন্দা, বছর ১৮’র শুভজিৎ-কে লাইফ সাপোর্টে বা ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক থেকে ক্রমেই গভীর সংকটজনক হয়ে উঠছে! তাই, পরিবার ও তার বন্ধুদের দাবি, শুভজিৎ-কে মেদিনীপুর থেকে কলকাতার এসএসকেএম (পিজি) বা মল্লিকবাজার নিউরো সাইন্সে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত। সেক্ষেত্রে ছাত্রের চিকিৎসার জন্য যা খরচ হবে, তা কলেজ কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে বলে দাবি মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের। এই দাবিতেই শুক্রবার দুপুর থেকে মেদিনীপুর কলেজ চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। SFI, AIDSO প্রভৃতি ছাত্র সংগঠনের তরফে কলেজে মিছিল করা হয়।
এদিকে, আহত ছাত্রের চিকিৎসার ‘সম্পূর্ণ ব্যয়ভার’ বহন করার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বিকেল তিনটে নাগাদ বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, “সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুর্ঘটনার পরই আহত দুই ছাত্রকে ভর্তি করা সহ সমস্ত দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে আমরা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রটির অভিভাবকরা যা চাইবেন, তাই হবে। আমরা আপাতত ১ লক্ষ টাকা এবং অ্যাম্বুলেন্সের খরচ দিয়ে একজন শিক্ষককে পাঠাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে আমরা আবারও বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আমাদের সন্তান-তুল্য ছাত্রের পাশে আছি।” অন্যদিকে, শুভজিতের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হওয়ায়, এখনই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে ICCU বা ভেন্টিলেশন থেকে বের করে, স্থানান্তরিত করার ঝুঁকি নিতে চাইছে না বলে কলেজের অন্য একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিবারের তরফে নিজেদের দায়িত্বে মল্লিকবাজার নিউরো সাইন্স বা কলকাতার অন্য কোন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, কলেজ কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও, মেদিনীপুর কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দাবি- ‘যথাসাধ্য’ নয়, ‘সম্পূর্ণ’ ব্যয়ভারই কলেজ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের গড়িমিসির জন্য তাদের বন্ধুর কিছু হয়ে গেলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে বলেও SFI-র তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার মেদিনীপুর কলেজের দত্তক নেওয়া গ্রাম শালবনীর গোহালডিহিতে অবস্থিত গোহালডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ চলছিল। কলেজের অনুমতি নিয়েই সেখানে যোগ দিয়েছিল নিউট্রিশন বিভাগের পড়ুয়ারা। শুভজিৎ ও জিতেন্দ্রনাথ একটি বাইকে করে পিড়াকাটার দিক থেকে গোহালডিহির দিকে আসার পথে মৌপাল সংলগ্ন চ্যাংশোল এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একটি বাসের সঙ্গে তাদের বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে দু’জন। দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিলোনা বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। স্থানীয়দের সাহায্যে রীতিমত আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই পড়ুয়াকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের তরফে। মাথায় গুরুতর আঘাত (ব্রেন হ্যামারেজ) থাকায় ICU-তে ভর্তি করা হয়েছিল শুভজিৎ দোলই-কে। তারপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই সংকটজনক হয়েছে! শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুভজিৎ-কে শুক্রবার বিকেল ৫-টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।