দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল: ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের (Midnapore College Collegiate Ground) অধিকার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকছে মেদিনীপুর কলেজ (Midnapore College) এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (Midnapore Collegiate School)-র হাতেই। মাঠের উপর সরকার বা প্রশাসনের কোনো ‘অধিকার’ নেই। খেলা ছাড়া অন্য কোনও কাজে এই মাঠ ব্যবহার করা যাবেনা। কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বা মেলা (কিছু ব্যতিক্রমী কর্মসূচি ছাড়া) প্রভৃতির জন্য সরকার বা প্রশাসন এই মাঠ আর ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধুমাত্র খেলাধুলার ক্ষেত্রে কলেজ কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষের ‘অনুমতি’ নিয়ে ব্যবহার করতে পারবে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে মেদিনীপুর জেলা আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশনামা (বা, রায়ের কপি) হাতে নিয়ে ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)- এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. সত্যরঞ্জন ঘোষ।

thebengalpost.net
সাংবাদিক বৈঠক কলেজ কর্তৃপক্ষের:

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এদিন এও জানিয়েছেন, গত ২৭ মার্চ (২০২৪) মেদিনীপুর জেলা আদালতের ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের পক্ষে রায়দান করেছেন। তাঁর সংযোজন, “রায় পাওয়ার পরে আমরা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক হাঁটতে চলেছি। এই মাঠ খেলাধুলা ছাড়া অন্য কোনও কাজে ব্যবহার হোক, আমরা তা চাইছিনা। আদালতও সেই নির্দেশই দিয়েছে।” এদিন বিকেলে কলেজ কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষের আইনজীবী কুশল মিশ্র-কে নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁর সংযোজন, ” মাঠ ব্যবহারের জন্য আগে যেমন কলেজ কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হতো। এখন থেকে আবারও সেই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে, খেলাধুলা ছাড়া অন্য কাজে মাঠের ব্যবহার হোক আমরা তা একেবারেই চাইছি না। যদি এর অন্যথা হয়, আমরা পুনরায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।”

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘আঁতুড়ঘর’ রূপে খ্যাত, দেড়শো বছরের ইতিহাস-বিজড়িত মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)-র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই মাঠ (৯.২৪ একর জমি) আগেও কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলেরই ছিল। ২০২০ সালে কলেজ-কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে জেলা প্রশাসন (বা, সরকার) সরকারি বা খাস জমি হিসেবে (খাস খতিয়ানে) রেকর্ড করে নেয়। এর বিরুদ্ধেই আদালতে গিয়ে অবশেষে তাঁরা জয়ী হয়েছেন। ফিরে পেয়েছেন ‘ঐতিহাসিক’ মাঠের অধিকার! প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে তৎকালীন জেলাশাসক রশ্মি কোমল সহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মাঠের অধিকার নিয়ে মূলত মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের একটি ‘বিরোধ’ এর কথা শোনা গিয়েছিল। ‘অনুমতি’ ছাড়া যথেচ্ছ ভাবে মাঠের ব্যবহার নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘প্রতিবাদ’ করাতেই এই বিরোধ বাধে বলে কলেজের একটি সূত্রে জানা যায়। সেই সভয় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ড. গোপাল চন্দ্র বেরা। এরপরই (২০২০ সালেরর ফেব্রুয়ারি মাসের পর), প্রশাসনের তরফে মাঠের ‘রেকর্ড’ করে নেওয়া হয় বলে দাবি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তা জানতে পারেন তথ্যের অধিকার আইন বা RTI-এর মাধ্যমে। এরপর, বিষয়টির জল গড়ায় ‘আদালত’ অবধি। আপাতত আদালতের রায়ে তাঁরা এবং আপামর মেদিনীপুরবাসী ‘নিশ্চিন্ত’ বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. ঘোষ। কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তনী সহ সচেতন শহরবাসীরও দাবি, “শহরবাসীর ‘ফুসফুস’ স্বরূপ ঐতিহাসিক এই মাঠ ব্যবহৃত হোক শুধু খেলাধুলার জন্যই। যথেচ্ছ ভাবে রাজনৈতিক মিটিং, সভা বা মেলার ফলে মাঠ তার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুইই হারাচ্ছে! যা কখনোই কাম্য নয়।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহার নয়, দাবি শহরবাসীর: