thebengalpost.net
বেনাডিহি গ্রামে উত্তেজনা:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জুলাই: ৮ মাস অতিক্রান্ত। মাঝখানে একজন পুলিশ সুপার পর্যন্ত বদলি হয়ে গেছেন। এখনও খোঁজ মেলেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের নেপুরা গ্রামের ৫ বছরের শিশু অরণ্য মাঝি-র। ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টা – সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ির উঠোন থেকেই উধাও হয়ে যায় অরণ্য। সেই ঘটনার দায়িত্বে এখন সিআইডি। তবে, ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি অরণ্য-র! এর মধ্যেই, গত ২৬ জুলাই বিকেল থেকে নিখোঁজ থাকা সদর ব্লকের (মেদিনীপুর সদর ব্লক) আরেক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হল, আজ, শনিবার (২৯ জুলাই) সকালে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের মহতাপনগর সংলগ্ন বেনাডিহি গ্রামের মৃত ওই ৭ বছরের শিশুটির নাম সাইফুল ইসলাম মণ্ডল। শনিবার সকালে বাড়ির অদূরে কংসাবতী নদী তীরবর্তী নির্জন এলাকা থেকে তার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই শিশুকে খুন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে তাঁরা আগুন লাগিয়ে দেন বলে সূত্রের খবর। ঘটনা ঘিরে সন্ধ্যা অবধি উত্তেজনা রয়েছে ওই এলাকায়। এলাকায় আছে কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।

thebengalpost.net
বেনাডিহি গ্রামে উত্তেজনা:

উল্লেখ্য যে, ৮ মাসের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনাই মেদনীপুর শহরের অদূরে গ্রামীণ এলাকায় ঘটেছে। তবে, প্রথম-টি মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত নেপুরা এলাকার। অন্যদিকে, এদিনের ঘটনাটি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত মহতাপনগর সংলগ্ন বেনাডিহি গ্রামের। মৃত ৭ বছরের শিশু (সাইফুল ইসলামের)-টির বাবা সাইদুল মণ্ডলের দায়ের করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, গত ২৬ জুলাই, বুধবার বিকেল ৫টা থেকে তার ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। চারিপাশে খোঁজাখুঁজির পর, ২৭ জুলাই কোতোয়ালি থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। আজ, শনিবার, বাড়ির অদূরে নদী তীরবর্তী নির্জন স্থান থেকে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনের পর দেহটি কিছুটা গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। গর্ত খুঁড়েই পচাগলা দেহ উদ্ধার করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। তাঁরা এও দাবি করেছেন, শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। দেহে একাধিক ক্ষত দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের। ঘটনায় দ্রুত এং যথাযথ পুলিশি তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। এর মধ্যেই, ক্ষুব্ধ কিছু বাসিন্দা মহরম উপেক্ষা করেই, বকুল গায়েন সহ সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন বলে জানা যায়। জেলা পুলিশের আধিকারিকদের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপরদিকে, মন্দিরময় পাথরার উপকন্ঠে মহতাপনগর সংলগ্ন বেনাডিহি-র এই ঘটনা ঘিরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জল্পনা ছড়িয়েছে। একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে মৃত শিশুর বাবা সাইদুল মন্ডলের দু’টি বিয়ে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী তাঁর ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন বেশ কয়েক বছর আগে। তবে, তাঁদের ছেলে (আনি মণ্ডল) সাইদুলের (বাবার) সঙ্গেই থাকত। গত, ৮-৯ বছর আগে সাইদুল মণ্ডল পুনরায় বিয়ে করেন। ৭ বছরের সাইফুল ইসলাম মণ্ডল তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। গ্রামবাসীদের মধ্যে অধিকাংশ জনের সন্দেহ, সাইদুল মণ্ডলের প্রথম পক্ষের ছেলে আনি মণ্ডল (বর্তমানে ২০-২২ বছর বয়স) এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে ছোট্ট সাইফুল ইসলামকে খুন করেছে। সম্পত্তির জন্যই খুন বলে তাদের অভিযোগ। এই খুনের সঙ্গে আনি মণ্ডল ঘনিষ্ঠ বকুল গায়েন বলে গ্রামের এক যুবক যুক্ত বলেও তাঁদের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক। তাঁর বাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দেন উত্তেজিত জনতা। আরো কয়েকজনের বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে সূত্রের খবর। এদিকে, সাইদুল মণ্ডলের প্রথম পক্ষের ছেলেকে (আনি মণ্ডলকে) ওই গ্রামের বাসিন্দারা একটি ক্লাবে আটক করে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তারপরই পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে বলে একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। যদিও, পুলিশের তরফে এই বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক শুধু এটুকুই জানিয়েছেন যে, নিখোঁজ থাকা ওই শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং তা ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ওই গ্রামেরই একটি বাড়ি থেকে পুলিশ এয়ার গান এবং ছুরি উদ্ধার করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

thebengalpost.net
সাইফুল ইসলাম মণ্ডলের ছবি, পরিবার সূত্রে পাওয়া:

thebengalpost.net
নিখোঁজ অরণ্য মাঝি-র ছবি হাতে তার বাবা-মা, অপেক্ষায় আজও (ফাইল ছবি):