দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ এপ্রিল: না আছে কোনো অনুমোদন। না আছে লুকিং গ্লাস! নেই হেড লাইট কিংবা ইন্ডিগেটরও! তার থেকেও ভয়ানক ব্যাপার হল, যখন-তখন যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে পড়া আর হঠাৎ করেই এদিক-ওদিক টার্ন নেওয়া। শুধু যানজট নয়, চরম পরিণতি হল মারাত্মক দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যু! তা সে দিনের বেলা হোক বা রাতে। হ্যাঁ, জেলা শহর মেদিনীপুরে গত ৩-৪ বছর ধরে যে বেলাগাম টোটো দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে, তাতে একপ্রকার অতিষ্ঠ শহরবাসী থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন। বর্তমান, পৌর প্রশাসন অবৈধ টোটোতে লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছেন অবশেষে। তবে, তার আগেই এক বেপরোয়া টোটো চালকের কান্ডজ্ঞানহীনতায় শনিবার (২৯ এপ্রিল) ভরদুপুরে জেলা শহরে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা! মৃত্যু হল তরতাজা এক যুবকের তথা বাইক চালকের। আহত বাইকে থাকা অপর এক যুবক। শনিবার দুপুর নাগাদ জেলা সদরে অবস্থিত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেন গেটের সামনে (অর্থাৎ বটতলাচক এলাকায়), শহরের ব্যস্ততম রাস্তার উপর এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত যুবকের নাম বিভাস মাইতি। বাড়ি শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত গুড়গুড়িপাল থানার লোহাটিকরি এলাকায়। বয়স মাত্র ৩৭। পেশায় ব্যবসায়ী বিভাস স্ত্রী ছাড়াও, ৩-৪ বছরের একটি ছেলে এবং ৬-৮ মাসের এক ফুটফুটে মেয়েকে রেখে অকালেই বিদায় নিলেন। ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার-পরিজন থেকে এলাকাবাসী! এদিকে, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন বিভাসের বাইকের পিছনে বসে থাকা সত্যজিৎ জানা নামে বছর ৪০’র অপর এক যুবক। তাঁর বাড়িও গুড়গুড়িপাল থানা এলাকাতেই বলে জানা গেছে। অপরদিকে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ওই টোটো চালক এখনও অবধি বেপাত্তা বলেই জানা গেছে। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান থেকে শুরু করে আপামর শহরবাসী।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর শহরের কেরানীটোলার দিক থেকে বটতলার দিকে বাইকে চেপে যাচ্ছিলেন দুই যুবক। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেন গেটের সামনের রাস্তায় একটি টোটো হঠাৎ করে উল্টো দিকে টার্ন নিয়ে নেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে! সজোরে এসে টোটোটিতে ধাক্কা মেরে রাস্তার উপর পড়ে যান বাইক চালক এবং আরোহী! আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেন ওই এলাকায় কর্মরত পৌরসভার কর্মচারীরা। চিকিৎসা শুরু হতে না হতেই মৃত্যু হয় বিভাসের। গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন সত্যজিৎ। সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় টোটো চালক। ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার পুলিশ আধিকারিক থেকে শুরু করে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান প্রমুখ। চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা বারবার বারণ করেছি হাসপালের গেটের সামনে টোটো না রাখতে। কিন্তু, টোটোগুলো এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটছেও, এমনকি মারাও যাচ্ছেন। আমরা আজ থেকেই ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় এই সমস্ত টোটো চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করব।” শহরের বুকে চলা প্রায় ৫-৬ হাজার অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধেও প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। মে মাস থেকেই অনুমোদন-বিহীন টোটো চলাচলে লাগাম টানা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।